কিন্তু ওর বাঁধন আলগা করে দেওয়া হয়েছে। ‘কান’ আর ‘আমি’, ‘ভ্রান্তির’ আর ‘ছলনে’ হসন্তের রীতিতে হওয়া উচিত ছিল যুক্তশব্দ, কিন্তু সাধুছন্দের নিয়মে ওদের জোড় বাঁধতে বাধা দেওয়া হয়েছে। একটা খাঁটি ছড়ার নমুনা দেখা যাক।
এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা মধ্যিখানে চর,
তারি মধ্যে বসে আছেন শিবু সদাগর।[১]
এটা পয়ার, কিন্তু চোদ্দ অক্ষরের সীমানা পেরিয়ে গেছে। তবু উচ্চারণ মিলিয়ে বানান করলে চোদ্দ অক্ষরের বেশি হবে না।
এপার্গঙ্গা ওপার্গঙ্গা মধ্যিখানে চর,
তারি মধ্যে বসে আছেন্সিবু সদাগর।
ছড়ায় প্রায় দেখা যায় মাত্রার ঘনতা কোথাও কম কোথাও বেশি, আবৃত্তিকারের উপর ছন্দ মিলিয়ে নেবার বরাত দেওয়া আছে। ছন্দের নিজের মধ্যে যে ঝোঁক আছে তার তাড়ায় কণ্ঠ আপনি প্রয়োজনমতো স্বর বাড়ায় কমায়।
শিবু ঠাকুরের বিয়ে হবে তিন কন্যে দান
এখানে ‘বিয়ে হবে’ শব্দে মাত্রা ঢিলে হয়ে গেছে। যদি থাকত
শিবু ঠাকুরের বিয়ের সভায় তিন কন্যে দান
তাহলে মাত্রা পুরো হত। কিন্তু বাংলাদেশে ছেলে বুড়ো এমন কেউ নেই যে আপনিই ‘বিয়ে- হবে-’ স্বরে টান না দেয়।
বক ধলো, বস্ত্র ধলো, ধলো রাজহংস,
তাহার অধিক ধলো কন্যে তোমার হাতের শঙ্খ।[২]
দুটো লাইনের মাত্রার কমি-বেশি স্পষ্ট; কিন্তু ভয়ের কারণ নেই, স্বতই আবৃত্তির টানে দুটো লাইনের ওজন মিলে যায়। ছন্দে চলতিভাষা আইনজারি না করেও আইন মানিয়ে নিতে পারে।