সবপ্রথমে পালকির দরজা গেছে খুলে, তার ঘটাটোপ হয়েছে বর্জিত। তবুও পয়ার যখন পংক্তির বেড়া ডিঙিয়ে চলতে শুরু করেছিল তখনো সাবেকি চালের পরিশেষরূপে গণ্ডির চিহ্ন পূর্বনির্দিষ্ট স্থানে রয়ে গেছে। ঠিক যেন পুরোনো বাড়ির অন্দরমহল; তার দেয়ালগুলো সরানো হয়নি, কিন্তু আধুনিককালের মেয়েরা তাকে অস্বীকার করে অনায়াসে সদরে যাতায়াত করছে। অবশেষে হাল-আমলের তৈরি ইমারতে সেই দেয়ালগুলো ভাঙা শুরু হয়েছে। চোদ্দ অক্ষরের গণ্ডিভাঙা পয়ার একদিন ‘মানসী’র এক কবিতায় লিখেছিলুম, তার নাম নিষ্ফল-প্রয়াস।[১] অবশেষে আরো অনেক বছর পরে বেড়াভাঙা পয়ার দেখা দিতে লাগল ‘বলাকা’য় ‘পলাতকা’য়। এতে করে কাব্যছন্দ গদ্যের কতকটা কাছে এল বটে, তবু মেয়ে-কম্পার্টমেন্ট্ রয়ে গেল, পুরাতন ছন্দোরীতির বাঁধন খুলল না। এমন কি সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় আর্যা প্রভৃতি ছন্দে ধ্বনিবিভাগ যতটা স্বাধীনতা পেয়েছে আধুনিক বাংলায় ততটা সাহসও প্রকাশ পায়নি। একটি প্রাকৃত ছন্দের শ্লোক উদ্ধৃত করি।
বরিস জল ভমই ঘণ গঅণ
সিঅল পবণ মণহরণ
কণঅ-পিঅরি ণচই বিজুরি ফুল্লিআ ণীবা।
পত্থর-বিত্থর-হিঅলা
পিঅলা নিঅলং ণ আবেই।[২]
- ↑ নিষ্ফল-প্রয়াস নয়, নিষ্ফল-কামনা।
- ↑ প্রাকৃতপৈঙ্গলম্ ১।১৬৬। এই ছন্দটির নাম মালা। মালা ছন্দের প্রথম পদে পঁয়তাল্লিশ মাত্রা। এর পরিপাটি হচ্ছে এরকম: প্রথমে ছত্রিশটি লঘুধ্বনি, তারপর গুরু-লঘু-গুরু ক্রমে তিন ধ্বনি ও সর্বশেষে দুটি গুরুধ্বনি। দ্বিতীয় পদের দুই ভাগ, প্রথম ভাগে বার ও দ্বিতীয় ভাগ্নে পনর মাত্রা। ‘আবেই’ শব্দের ‘ই’ ধ্বনিটি দ্বিমাত্রক বলে গণনীয়: পৃ ১১০ পাদটীকা ১ স্রষ্টব্য। ‘ণিঅলং’ শব্দটি বোধ করি অনবধানতাবশতই বঙ্গশ্রী ও প্রথম সংস্করণের ধৃত পাঠে বাদ পড়ে গিয়েছিল। এই সংস্করণে শব্দটিকে যথাস্থানে স্থাপন করা গেল।