বাংলাভাষার স্বাভাবিক ছন্দ
প্রকাশক সিন্ধুদূত[১]-এর ছন্দ সম্বন্ধে বলিতেছেন, “সিন্ধুদূতের ছন্দঃ প্রচলিত ছন্দঃসকল হইতে একরূপ স্বতন্ত্র ও নূতন। এই নূতনত্বহেতু অনেকেরই প্রথম-প্রথম পড়িতে কিছু কষ্ট হইতে পারে।...বাঙ্গালা ছন্দের প্রাণগত ভাব কি ও তাহার স্বাভাবিক গতি কোন্দিকে এবং কি প্রণালীতেই বা ইচ্ছা মতে উহার সুন্দর বৈচিত্র্যসাধন করা যায়, ইহার নিগূঢ়তত্ত্ব সিন্ধুদূতের ছন্দঃ আলোচনা করিলে উপলব্ধ হইতে পারে।”
আমাদের সমালোচ্য গ্রন্থের ছন্দ পড়িতে প্রথম-প্রথম কষ্ট বোধ হয় সত্য; কিন্তু ছন্দের নূতনত্ব তাহার কারণ নহে, ছত্রবিভাগের ব্যতিক্রমই তাহার একমাত্র কারণ। নিম্নে গ্রন্থ হইতে একটি শ্লোক উদ্ধৃত করিয়া দিতেছি।
এ কি এ, আগত সন্ধ্যা, এখনো রয়েছি বসে সাগরের তীরে?
দিবস হয়েছে গত, না জানি ভেবেছি কত,
প্রভাত হইতে বসে রয়েছি এখানে বাহ্য জগৎ পাশরে,
ক্ষুধাতৃষ্ণা নিদ্রাহার কিছু নাহি মোর; সব ত্যজেছে আমারে।
রীতিমতো ছত্রবিভাগ করিলে উপরিউদ্ধৃত শ্লোকটি নিম্নলিখিত আকারে প্রকাশ পায়।
এ কি এ, আগত সন্ধ্যা, এখনো রয়েছি বসে
সাগরের তীরে?
দিবস হয়েছে গত,
না জানি ভেবেছি কত,
- ↑ ‘ভুবনমোহিনী প্রতিভা’র (১৮৭৫-৭৭) কবি নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রণীত। ‘সিন্ধুদুত’ (১৮৮৩) এঁর তৃতীয় কাব্য।