পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ
১৮৩

শ্রোতাদের মনে পেরেক মারিয়া যাওয়া। অনেক নির্জীব রচনাও এই কৃত্রিম উপায়ে অতি দ্রুতবেগে মনোযোগ আচ্ছন্ন করিয়া বসে। বাংলা পাঁচালিতেও এই কারণেই এত অনুপ্রাসের ঘটা।[১]

 সাধনা—১৩০২ জ্যৈষ্ঠ


কৌতুককাব্যের ছন্দ

 পদ্যকে সমিল গদ্যরূপে চালাইবার কোনো হেতু নাই।[২] ইহাতে পদ্যের স্বাধীনতা বাড়ে না, বরঞ্চ কমিয়া যায়। কারণ কবিতা পড়িবার সময় পদ্যের নিয়ম রক্ষা করিয়া পড়িতে স্বতই চেষ্টা জন্মে, কিন্তু মধ্যে মধ্যে যদি স্খলন হইতে থাকে তবে তাহা বাধাজনক ও পীড়াদায়ক হইয়া উঠে।

 বায়রনের ডন জুয়ানে কবি অবলীলাক্রমে যথেচ্ছ কৌতুকের অবতারণা করিয়াছেন। কিন্তু নির্দোষ ছন্দের সুকঠিন নিয়মের মধ্যেই সেই অনায়াস অবলীলাভঙ্গি পাঠককে এরূপ পদে পদে বিস্মিত করিয়া তোলে। ইনগোলডসবি-কাহিনী[৩] প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত নিম্নশ্রেণীর কৌতুককাব্যেও ছন্দের অস্খলিত পারিপাট্য বিশেষরূপে লক্ষিত হয়।

 বস্তুত ছন্দের শৈথিল্যে হাস্যরসের নিবিড়তা নষ্ট করে। কারণ হাস্যরসের প্রধান দুইটি উপাদান অবাধ দ্রুতবেগ ও অভাবনীয়তা। যদি পড়িতে গিয়া ছন্দে বাধা পাইয়া যতিস্থাপন সম্বন্ধে দুই-তিন বার দুই-তিন রকম পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হয় তবে সেই চেষ্টার মধ্যে হাস্যের তীক্ষ্ণতা আপন ধার নষ্ট করিয়া ফেলে।[৪]


  1. দৃষ্টান্ত ২-৩ পৃষ্ঠার দ্রষ্টব্য।
  2. এই রচনাংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘আষাঢ়ে’ (১৩০৫) কাব্যের ছন্দ-সমালোচনা। উক্ত কাব্যের ভূমিকার গ্রন্থকার লিখেছেন, “এ-কবিতাগুলির...ছন্দোবব্ধ অতীব শিথিল। ইহাকে সমিল গদ্য নামেই অভিহিত করা সংগত”।
  3. বস্তুত ‘আষাঢ়ে’র কবিতাগুলি Rev. R. A. Burham রচিত Ingoldsby Legends-এর অনুকরণেই লেখা। দ্রষ্টব্য নবকৃষ্ণ ঘোষের ‘দ্বিজেন্দ্রলাল’, একাদশ পরিচ্ছেদ।
  4. তুলনীয়: কোন্‌খানে হাঁপ ছাড়িতে হইবে...বাহির করিতে হয় পৃ ১৭০।