পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৮

চিঠিপত্র

প্রমথ চৌধুরীকে লেখা

 চলতি কথায় একটা লম্বা ছন্দের[১] কবিতা লিখেছি। এটা কি পড়া যায় কিংবা বোঝা যায় কিংবা ছাপানো যেতে পারে। নাম-রূপের মধ্যে রূপটা আমি দিলুম, নাম দিতে হয় তুমি দিয়ো।[২]

যারা আমার সাঁঝ-সকালের গানের দীপে জ্বালিয়ে দিলে আলো
আপন হিয়ার পরশ দিয়ে, এই জীবনের সকল সাদা-কালো
যাদের আলো-ছায়ার লীলা, বাইরে বেড়ায় মনের মানুষ যারা
তাদের প্রাণের ঝরনাস্রোতে আমার পরান হয়ে হাজার-ধারা
চলছে বয়ে চতুর্দিকে। কালের যোগে নয় তো মোদের আয়ু,
নয় সে কেবল দিবস-রাতির সাতনলি হার, নয় সে নিশাসবায়ু।
নানান প্রাণের প্রেমের মিলে নিবিড় হয়ে আত্মীয়ে বান্ধবে
মোদের পরমায়ুর পাত্র গভীর ক’রে পুরণ করে সবে।
সবার বাঁচায় আমার বাঁচা আপন সীমা ছাড়ায় বহুদূরে,
নিমেষগুলির ফল পেকে যায় বিচিত্র আনন্দরসে পুরে;
অতীত হয়ে তবুও তারা বর্তমানের বৃত্ত-দোলায় দোলে,—
গর্ভ হতে মুক্ত শিশু তবুও যেমন মায়ের বক্ষে কোলে
বন্দী থাকে নিবিড় প্রেমের বাঁধন দিয়ে। তাই তো যখন শেষে
একে একে আপন জনে সূর্য-আলোর অন্তরালের দেশে

  1. প্রাকৃত-বাংলার মহাপয়ার বা দীর্ঘপয়ার; অধিকন্তু এটি পংক্তিলঙ্ঘক বা লাইন-ডিঙানো চালে রচিত। এ-ধরনের ছন্দের এটিই প্রথম নিদর্শন, তাই ‘এটি কি পড়া যার’ এ প্রশ্ন করা হয়েছে।
  2. কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘সবুজপত্রে’ (১৩২৪ জ্যৈষ্ঠ) ‘পরমায়ু’ নামে। পরে ‘পলাতকা’য় ‘শেষ গান’ নামে ও ‘পূরবী’তে ‘পূরবী’ নামে গৃহীত হয়। প্রত্যেকবারই কবিতাটি কিছু-কিছু পরিবর্তিত হয়েছে।