পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিঠিপত্র
১৮৯

আঁখির নাগাল এড়িয়ে পালায়, তখন রিক্ত শীর্ণ জীবন মম
শুষ্ক রেখার মিলিয়ে আসে বর্ষাশেষের নির্ঝরিণী সম
শূন্য বালুর একটি প্রান্তে ক্লান্তবারি স্রস্ত অবহেলায়।
তাই যারা আজ রইল পাশে এই জীবনের অপরাহ্ণ-বেলায়
তাদের হাতে হাত দিয়ে তুই গান গেয়ে নে থাকতে দিনের আলো—
বলে নে ভাই, “এই যা দেখা, এই যা ছোঁওয়া, এই ভালো, এই ভালো।
এই ভালো আজ এ-সংগমে কান্নাহাসির গঙ্গাযমুনার
ঢেউ খেয়েছি, ডুব দিয়েছি, ঘট ভরেছি, নিয়েছি বিদায়।
এই ভালো রে প্রাণের রঙ্গে এই আসঙ্গ সকল অঙ্গে মনে
পুণ্য ধরার ধুলো-মাটি ফল-হাওগ-জল তৃণ-তরুর সনে।
এই ভালো রে ফুলের সঙ্গে আলোয় জাগা, গান গাওয়া এই ভাষায়,
তারার সাথে নিশীথ-রাতে ঘুমিয়ে পড়া নূতন প্রাতের আশায়।”

 এই জাতের সাধু ছন্দে আঠার অক্ষরের আসন থাকে।[১] কিন্তু এটাতে কোনো কোনো লাইনে পঁচিশ পর্যন্ত উঠেছে। ফার্স্ট ক্লাসের এক বেঞ্চিতে ছ-জনের বেশি বসবার হুকুম নেই কিন্তু থার্ড ক্লাসে ঠেলাঠেসি ভিড়, এ সেইরকম। কিন্তু যদি এটা ছাপাও তাহলে লাইন ভেঙো না, তাহলে ছন্দ পড়া কঠিন হবে। স্মল পাইকায় মার্জিন কম দিয়ে ছাপলে পঁচিশ অক্ষর ধরতে পারবে।

 ১৩২৪ জ্যৈষ্ঠ ৪


প্যারীমোহন সেনগুপ্তকে লেখা

 সংস্কৃত কাব্য অনুবাদ সম্বন্ধে আমার মত এই যে, কাব্যধ্বনিময় গদ্যে ছাড়া বাংলা পদ্যচ্ছন্দে তার গাম্ভীর্য ও রস রক্ষা করা সহজ নয়। দুটি-চারটি শ্লোক কোনোমতে বানানো যেতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ কাব্যের অনুবাদকে সুখপাঠ্য ও সহজবোধ্য করা দুঃসাধ্য। নিতান্ত সরল পয়ারে তার অর্থটিকে প্রাঞ্জল করা যেতে পারে। কিন্তু তাতে ধ্বনিসংগীত মারা

  1. তুলনীয়: গম্ভীর পাতাল, যথা... পৃ৪৬, ১২০ এবং হিমাদ্রির ধ্যানে যাহা...পৃ ৬৯৷