পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দ
১৯১

দিলীপকুমার রায়কে লেখা

গীতাঞ্জলির কয়েকটি গানের ছন্দ সম্বন্ধে কৈফিয়ত চেয়েছ। গোড়াতেই বলে রাখা দরকার, গীতাঞ্জলিতে এমন অনেক কবিতা আছে যার ছন্দোরক্ষার বরাত দেওয়া হয়েছে গানের সুরের ’পরে।[১] অতএব যে-পাঠকের ছন্দের কান আছে তিনি গানের খাতিরে এর মাত্রা কম-বেশি নিজেই দুরস্ত করে নিয়ে পড়তে পারেন, যাঁর নেই তাঁকে ধৈর্য অবলম্বন করতে হবে।

 ১।‘নবনব রূপে এস প্রাণে’— এই গানের অন্তিম পদগুলির কেবল অন্তিম দুটি অক্ষরের দীর্ঘ স্বরের সম্মান স্বীকৃত হয়েছে। যথা ‘প্রাণে, গানে’ ইত্যাদি। একটিমাত্র পদে তার ব্যতিক্রম আছে। এস দুঃখে সুখে, এস মর্মে—এখানে ‘সুখে’র এ-কারকে অবাঙালি রীতিতে দীর্ঘ করা হয়েছে। ‘সৌখ্যে’ কথাটা দিলে বলবার কিছু থাকত না। তবু সেটাতে রাজি হইনি, মানুষ চাপা দেওয়ার চেয়ে মোটর ভাঙা ভালো।

 ২। ‘অমল ধবল পা- লে লেগেছে মন্দ-মধুর হাওয়া’—এ-গানে গানই মুখ্য, কাব্য গৌণ। অতএব তালকে সেলাম ঠুকে ছন্দকে পিছিয়ে থাকতে হল। যদি বল, পাঠকেরা তো শ্রোতা নয়, তারা মাপ করবে কেন। হয়তো করবে না— কবি জোড়হাত করে বলবে, ‘তালদ্বারা ছন্দ রাখিলাম, ত্রুটি মার্জনা করিবেন’।

 ৩। ৩৪ নম্বরটাও গান।[২] তবুও এর সম্বন্ধে বিশেষ বক্তব্য হচ্ছে এই

  1. তুলনীয়: “প্রবাহিণীতে যে-সমস্ত রচনা প্রকাশ করা হইল তাহার সবগুলিই গান, সুরে বসানো। এই কারণে কোনো কোনো পদে ছন্দের বাঁধন নেই। তৎসত্ত্বেও এগুলিকে গীতিকাব্যরূপে পড়া যাইতে পারে বলিয়া আমার বিশ্বাস।” প্রবাহিণী (১৩৩২), ভূমিকা।
  2. ‘আমার মিলন লাগি তুমি আসছ কবে থেকে’ ইত্যাদি।