পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
ছন্দ

সেটা অন্যায় বলনি। ঐ বাহুল্যের জন্যে ‘পঞ্জাব’ শব্দের প্রথম সিলেব্‌ল্‌টাকে দ্বিতীয় পদের গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখি—

পন্। জাব সিন্ধু গুজরাট মারাঠা ইত্যাদি।

‘পঞ্জাব’কে ‘পঞ্জব’ করে নামটার আকার খর্ব করতে সাহস হয়নি, ওটা দীর্ঘকায়াদের দেশ। ছন্দের অতিরিক্ত অংশের জন্যে একটু তফাতে আসন পেতে দেওয়া রীতি বা গীতি বিরুদ্ধ নয়।[]  এই গেল আমার কৈফিয়তের পালা।  তোমার ছন্দের তর্কে আমাকে সালিস মেনেছ। ‘লীলানন্দে’র যে-লাইনটা নিয়ে তুমি অভিযুক্ত আমার মতে তার ছন্দঃপতন হয়নি। ছন্দ রেখে পড়তে গেলে কয়েকটি কথাকে অস্থানে খণ্ডিত করতে হয় বলেই বোধ হয় সমালোচক ছন্দঃপাত কল্পনা করেছেন।[] ভাগ করে দেখাই।

নৃত্য। শুধু বি-। লানো লা-। বণ্য। ছন্দ

আসলে ‘বিলানো’ কথাটাকে দুভাগ করলে কানে খটকা লাগে।

নৃত্য শুধু লাবণ্য-বিলানো ছন্দ

লিখলে কোনোরকম আপত্তি মনে আসে না, অর্থ হিসাবেও স্পষ্টতর হয়। ঐ কবিতায় যে-লাইনে তোমার ছন্দের অপরাধ ঘটেছে সেটা এই

সংগীতসুধা নন্দনে(র) সে আলিম্পনে।

ভাগ করে দেখ

সংগী। ত সুধা। নন্দ। নের সে আ। লিম্পনে।

  1. পৃ ১৭১ পাদটীকা ১ এবং সঞ্চয়িতা (চতুর্থ সং) গ্রন্থপরিচয় অংশে এই গানটির ছন্দোবিশ্লেষণ দ্রষ্টব্য।
  2. তুলনীয়: বোধ হয় অর্থও শব্দকে...কৃত্রিম ঠেকেছে পৃ ১০৪। শব্দমধ্যবর্তী ঝোঁকের ঠিক পূর্বেই হচ্ছে ছেদস্থাপন করার স্বাভাবিক স্থান, অন্যত্র করলেই সেটা হয় ‘অস্থান’। শব্দকে অস্থানে খণ্ডিত করলেই কানে খটকা লাগে, যথাস্থানে করলে লাগে না। পরবর্তী ‘বিলানো’ ও ‘লাবণ্য’ শব্দের ছেদগত পার্থক্য লক্ষণীয়।