পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০২
ছন্দ

চলবে না। এই কারণে বাংলায় বিশুদ্ধ সংস্কৃত ছন্দ চালাতে গেলে দীর্ঘ স্বরধ্বনির জায়গায় যুক্তবর্ণের ধ্বনি দিতে হয়। সেটার জন্যে বাংলাভাষা ও পাঠককে সর্বদা ঠেলা মারতে হয় না। অথবা দীর্ঘস্বরকে দুই মাত্রার মূল্য দিলেও চলে।[১] যদি লিখতে

হে অমল চন্দনগঞ্জিত, তনু রঞ্জিত
হিমানীতে সিঞ্চিত স্বর্ণ,

[২]

তাহলে চতুষ্পাঠীর বহির্বর্তী পাঠকের দুশ্চিন্তা ঘটাত না।

 ১৯৩৬ জুলাই ৮

 বাংলায় প্রাক্‌হসন্ত স্বর দীর্ঘায়ত হয় একথা বলেছি। জল এবং জলা, এই দুটো শব্দের মাত্রাসংখ্যা সমান নয়।[৩] এইজন্যেই ‘টুমুস্ টুমুস্ বাদ্যি বাজে’ পদটাকে ত্রৈমাত্রিক বলেছি। টু-মু দুই সিলেব্‌ল্, পরবর্তী হসন্ত স্-ও এক সিলেব্‌ল্‌এর মাত্রা নিয়েছে পূর্ববর্তী উ স্বরকে সহজেই দীর্ঘ করে। ‘টুমু টুমু বাজা বাজে’ এবং ‘টুমুস্ টুমুস বাদ্যি বাজে’ এক ছন্দ নয়। ‘রণিয়া রণিয়া বাজিছে বাজনা’ এবং ‘টুমুস্‌ টুমুস্‌ বাদ্যি বাজে’ এক ওজনের ছন্দ। দুটোই ত্রৈমাত্রিক। আমি প্রচলিত ছড়ার দৃষ্টান্তও দেখিয়েছি।[৪]

 ১৯৩৬ জুলাই ২০
  1. তুলনীয়: বাংলার সেই ...দাঁড় করানো যেতে পারে পৃ ৯৩।
  2. এ-ছন্দটি জয়দেবের

    দিনমণিমণ্ডলমণ্ডন ভবখণ্ডন
    মুনিজনমানসহংস

    ইত্যাদি গানটির (গীতগোবিন্দ, প্রথম সর্গ, দ্বিতীয় গীত) অনুসরণে রচিত।

  3. দ্রষ্টব্য পৃ ১৮৬ পাদটীকা ১।
  4. দ্রষ্টব্য পৃ ১২৭