পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভাষণ
২১৫

...ও-রকম না করলেই ভালো হত। বাস্তবিক ও-কবিতাটির জন্যে আমি একটু কুণ্ঠিত আছি। ও-রকম করার একটু কারণও আছে। যুগ্মধ্বনিকে দুমাত্রা হিসেব করে ছন্দ রচনা করলে ও-ছন্দে ‘অনাথপিণ্ডদ’ কথাটা ব্যবহার করা মুশকিল। তাই সমস্ত কবিতাটিতেই যুগ্মধ্বনিকে এক unit বলেই চালিয়ে দিয়েছিলুম। কিন্তু অসমমাত্রার আর-কোনো ছন্দেই আমি যুগ্মধ্বনিকে এক unit বলে গণ্য করিনি।...

 সমমাত্রার ছন্দের অর্থাৎ পয়ারজাতীয় ছন্দের বিশেষত্বই হচ্ছে এই যে, এছন্দে দুই চার ছয় আট দশ প্রভৃতি দুয়ের multipleএর পর ইচ্ছামতো যতি স্থাপন করা যায়। এখানেই এছন্দের শক্তি। আর এজন্মেই এজাতীয় ছন্দে আঁজাব্‌মা (enjumbement) চালানো সম্ভব হয়েছে। ... যেখানেই দুয়ের multiple পাওয়া যায় সেখানেই থামতে পারা যায় বলেই প্রবহমান পয়ার রচনা করা সম্ভব হয়েছে।[১] এছন্দে অযুগ্মসংখ্যার পর যতি দেওয়া চলে না। মধুসুদন অবশ্য ‘অকালে’র পর যতি দিয়েছেন।[২] এটাকে অবশ্য একরকম করে সমর্থনও করা যায়। কিন্তু তথাপি বলতে হয় যে, এছন্দে অযুগ্ম unit এর পর যতি না দেওয়াই রীতি। আর এজন্যেই অসমমাত্রার ছন্দে আজঁব্‌মা বা প্রবহমানতা আনা যায় না।[৩] যেছন্দে তিনের পরে ভাগ, যাকে আমি বলেছি অসমমাত্রার ছন্দ, তাতে যেখানে-সেখানে থামা যায় না, লাইনের মধ্যেও থামা যায় না, একেবারে লাইনের শেষে গিয়ে থামতে হয়।[৪]

  1. আঁজাব্‌মাঁ বা প্রবহমানতা মানে পংক্তিলঙ্ঘন বা লাইনডিঙানো চাল। দ্রষ্টব্য পাদটিকা ১৫৩ ও ১৬৩ পৃষ্ঠা।
  2. তুলনীয়: তার অকাল মৃত্যুর ... অকালে পৃ ৪৫।
  3. অসম ও বিষম মাত্রার ছন্দে কেন প্রবহমানতা আনা যায় না তা দৃষ্টান্তযোগে ব্যাখ্যাত হয়েছে ১৫৪-৫৬ পৃষ্ঠায়।
  4. দ্রষ্টব্য পৃ ১৮০ পাদটীকা ১।