পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৬
ছন্দ

যেমন—

একদিন দেব তরুণ তপন
হেরিলেন সুরনদীর জলে,
অপরূপ এক কুমারীরতন
খেলা করে নীল নলিনীদলে।

...অসম সংখ্যার পর ধ্বনি থামতে পারে না। সেখানে একটা ভাগ থাকলেও ধ্বনিটা পরবর্তী বিভাগের গায়ে গড়িয়ে পড়ে। যেমন—

পঞ্চশরে দগ্ধ করে করেছ এ কী সন্ন্যাসী

এখানে ‘পঞ্চশরে’ কথাটার পরে যতিটা স্থায়ী হয় না।...

 ইংরেজি ভাষার একটা মস্ত গুণ এই যে, ওভাষায় প্রত্যেকটি শব্দেরই একটা বিশেষ জোর আছে; সেটা ওভাষার accentএর জন্যেই হয়। প্রত্যেকটি শব্দই নিজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে চলে, অন্য কথার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে না। শব্দগুলিকে এভাবে জোর দিয়ে দিয়ে উচ্চারণ করতে হয় বলেই ইংরেজি ছন্দ এরূপ তরঙ্গিত হয়ে ওঠে। কিন্তু বাংলা শব্দগুলি বড়ো শান্তশিষ্ট, তারা ধ্বনিকে আঘাত করে তরঙ্গিত করে তোলে না। এজন্য বাংলায় আমরা এক ঝোঁকে অনেকগুলো শব্দ উচ্চারণ করে আবৃত্তি করে যাই, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই অর্থবোধ হয় না।[১] অর্থবোধের জন্যে বিষয়টাকে আবার ফিরে পড়তে হয়। এ অভাবট। মধুসূদন খুব অনুভব করেছিলেন। তাই তিনি বেছে বেছে যুক্তাক্ষরবহুল সংস্কৃত শব্দের ব্যবহারের দ্বারা বাংলার এই দুর্বলতাটা দূর করতে চেয়েছিলেন। এজন্যেই তাঁর কাব্যে ‘ইরম্মদ’ প্রভৃতি শব্দের ব্যবহার হয়েছে। আর তাতে ছন্দের মধ্যেও অনেকখানি তরঙ্গায়িত ভঙ্গি দেখা দিয়েছে। ‘যাদঃপতিরোধঃ যথা চলোর্মি-আঘাতে’ প্রভৃতি পংক্তিতে ধ্বনিটা আঘাতে আঘাতে কেমন তরঙ্গিত হয়ে উঠেছে তা দেখতে পাচ্ছ।[২] অল্পবয়সে

  1. দ্রষ্টব্য পৃ ১৮২ পাদটীকা ১।
  2. দ্রষ্টব্য পৃ ১৭৮ পাদটীকা ৩,৪।