পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভাষণ
২১৯

একসময় rhythmic prose লিখতে চেষ্টা করেছিল। তার লেখা আমার ভালো লেগেছিল, কিন্তু বেশি প্রলম্বিত এবং অসংশ্লিষ্ট হওয়াতে চলল না।.... ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদের proseএ যে rhythm রয়েছে তাতে সে দেশের লোকেরা আকৃষ্ট হয়েছে। মনে করেছি বাংলা গদ্যেও ও-রকম rhythm রেখে কিছু রচনা করব।[১] ...

 আধুনিক কবিরা যে মিল বর্জন করে লাইন ভেঙে ভেঙে কবিতা রচনা করছে তাতে কিছু দোষ নেই। মিল না দেওয়াটা মোটেই অন্যায় নয়। কিন্তু অমিল কবিতা রচনা করা খুবই শক্ত, তাতে বিশেষ শক্তির প্রয়োজন।···মিল জিনিসটার প্রতি কিছুকাল পূর্বেকার কবিদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সতর্কতা ছিল না। তাঁদের অনেকে পংক্তির শেষে কোনো রকমে একটুখানি মিল ঘটিয়েই তৃপ্ত হতেন; অনেক সময় তো শুধু রে হে ইত্যাদি দিয়েই মিলের কাজ শেষ করতেন।[২] ....

 ছন্দ কেমন হবে কবিরাই ঠিক করবেন, তাঁরা নিজের কান আর ছন্দবোধের উপর নির্ভর করে নতুন নতুন ছন্দ রচনা করবেন। ইংরেজি সাহিত্যে একসময়ে ছন্দের ভাগ অত্যন্ত নির্দিষ্ট ছিল, কোথাও ব্যতিক্রম হত না। তারপর কোলরিজ প্রভৃতি কবিরা এসে নতুন ছন্দের প্রবর্তন করলেন, তাঁরা কাটাকাটা ছন্দের ভাগ মানলেন না, কোথাও বেশি কোথাও কম চালাতে লাগলেন। প্রথম প্রথম তাতে আপত্তি হয়েছিল। পরে কিন্তু তাঁদের প্রথাটাই চলে গেল। সুতরাং ছন্দের কোনো অকাট্য নিয়ম নেই, এ কথাটা মনে রাখা দরকার।...যে-ছন্দ কানকে খুশি করতে পারবে না সে-ছন্দ কেউ পড়বে না। এর চেয়ে বড়ো শাস্তি আর কী আছে। কাজেই যেখানটাতে কান খুশি হয় না সেখানটাতে ছন্দপতন হয়েছে এ-কথাও বলা চলে।

 বিচিত্রা— ১৩৩৯ জ্যৈষ্ঠ
  1. দ্রষ্টব্য ‘গদ্য কবিতা ও ছন্দ’ পৃ ১৮৬-৮৭।
  2. মিলের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে ১৭৬ ও ১৮৪ পৃষ্ঠায়।