অনুরোধ করি যে কৌতূহলবশত বাহাদুরি নেবার জন্য আমি কখনও নূতন ছন্দ বানাবার চেষ্টা করিনি, সেটা আমার কাছে অদ্ভুত বলে মনে হয়। মানসীতে যে ছন্দের পরিবর্তন এসেছিল সেটা ধ্বনির দিক্ থেকে। লক্ষ্য করেছিলাম, বাংলা কবিতায় জোর পাওয়া যায় না, তার মধ্যে ধ্বনির উচ্চনীচতা নেই, বাংলা কবিতা অতি দ্রুত গড়িয়ে চলে যায়। ইংরেজিতে একসেন্ট্, সংস্কৃতে তরঙ্গায়িততা আছে। বাংলায় তা নেই বলেই পূর্বে পয়ারে সুর করে পড়া হত, টেনে টেনে অতিবিলম্বিত করে পড়া হত, তাই অর্থবোধে কষ্ট হত না। লক্ষ্য করেছি বাংলা কবিতা কানের ভিতর ধরে না, বোঝবার সম্ভাবনাও ঝাপসা হয়ে যায়।[১] এর প্রতিকার চাই। বাংলায় দীর্ঘহ্রস্ব উচ্চারণ চালানোটা হাস্যকর, সেটা হাস্যরসেই প্রযুক্ত হতে পারে, যেমন আমার বড়োদাদা চালিয়ে ছিলেন।[২]
বিলাতে পালাতে ছটফট করে নব্য-গউড়ে।
কিন্তু সাধারণ ব্যবহারে সেটা অচল। এজন্য আমি যুক্তাক্ষরগুলিকে পুরোমাত্রার ওজন দিয়ে ছন্দ রচনা মানসীতে আরম্ভ করেছিলাম। এখন সেটা চলতি হয়ে গেছে; ছন্দের ধ্বনিগাম্ভীর্য তাতে বেড়েছে।[৩] পরে পরে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলেছি। ‘ক্ষণিকা’ যখন লিখলুম তখন লোকের ধাঁধা লেগে গেল।•••এমনি করে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এসেছি। ‘বলাকা’য় নূতন পর্ব এসেছে, ভাব ভাষা ও ছন্দ নূতন পথে গেছে। দেখেছি কাব্যের নূতন রূপ স্বীকার করে নিতে সময় লাগে, অনভ্যস্ত ধ্বনি ও ভাবের রস গ্রহণে মন স্বভাবতই বিমুখ হয়।•••