পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২২
ছন্দ

 বাংলায় নূতন ছন্দ অনেক আমিই প্রবর্তিত করেছি। একসময় যা রীতিবিরুদ্ধ ছিল আজ সেটাই orthodox, classical হয়ে গেছে। আমার এখনকার কবিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এই, যা গদ্য তা কখনো কবিতা হতে পারে না।... ভাষার যে একটুখানি আড়াল কাব্যে মাধুর্য জোগায় গদ্যে তার অভাব; গদ্য হচ্ছে কথার ভাষা, খবর দেবার ভাষা। যে ভাষা সর্বদা প্রচলিত নয় তার মধ্যে যে একটা দূরত্ব আছে তারই প্রয়োগে কাব্যের রস জমে ওঠে। অধুনা ‘শেষসপ্তক’ প্রভৃতি গ্রন্থে আমি যে ভাষা, ছন্দ প্রয়োগ করেছি তাকে ‘গদ্য’ বিশেষণে অভিহিত করা হয়েছে। গদ্যের সঙ্গে তার সাদৃশ্য আছে বলে কেউ কেউ তাকে বলেছেন গদ্যকাব্য, সোনার পাথরবাটি। আমি বলি, যাকে সচরাচর আমরা গদ্য বলে থাকি সেটা আর আমার আধুনিক কাব্যের ভাষা এক নয়,[১] তার একটা বিশেষত্ব আছে যাতে সেটা কাব্যের বাহন হতে পারে; সে ভাষায় ও ভঙ্গিতে কোনো সাপ্তাহিক পত্রিকা লিখিত হলে তার গ্রাহকসংখ্যা কমবেই, বাড়বে না। এর একটা বিশেষত্ব আছে যাকে আমার মন কাব্যের ভাষা বলে স্বীকার করে নিয়েছে। এই ভঙ্গিতে আমি যা লিখেছি, আমি জানি তা অন্য কোনো ছন্দে বলতে পারতুম না।... অনেকে মনে করেন কবিতা লেখা এতে সহজ হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় বাঁধা ছন্দেই তো রচনা হুহু করে চলে, ছন্দই প্রবাহিত করে নিয়ে যায়; কিন্তু যেখানে বন্ধন নেই অথচ ছন্দ আছে, সেখানে মনকে সর্বদা সতর্ক করে রাখতে হয়।

 প্রবাসী—১৩৪৩ আষাঢ়
  1. তুলনীয়: গদ্য বললে অতিব্যাপ্তি দোষ ঘটে।...তৈজস গদ্য। পৃ ২০৩।