পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩২
ছন্দ

বলে কোনো অদ্ভুত পদার্থ বাংলায় কিংবা অন্য কোনো ভাষাতেই নেই। অক্ষর ধ্বনির চিহ্ন মাত্র” (পৃ ৬১)। ছন্দ ধ্বনির উপরেই প্রতিষ্ঠিত, তার চিহ্নের উপরে নয়।

 অতিপর্ব (anacrusis)— অনেক সময় ছন্দপংক্তির সমুখে একটি করে দুই বা তিন মাত্রা পরিমিত খণ্ডপর্ব থাকে, যা ঠিক ছন্দপংক্তির অন্তর্‌ভুক্ত নয় অথচ যার প্রভাবে ছন্দের দোলায় বেশ একটু বৈচিত্র্য দেখা দেয়। এ-রকম অতিরিক্ত খণ্ডপর্বকে বলা হয় অতিপর্ব (পৃ ১৭১)। অতিপর্ব মূল পংক্তি থেকে একটু বিচ্ছিন্নভাবে উচ্চারিত ও লিখিত হয়। চলতি কথায় এ-রকম উচ্চারণকে বলা হয় ‘আড়ে’ রাখা (পৃ ১০২)। ১২৯-১৩১ পৃষ্ঠায় উদাহৃত তিনটি দৃষ্টান্তের ওরে, এমন, শুনি প্রভৃতি, বিচ্ছিন্ন শব্দগুলি অতিপর্ব।

 অনুষ্টুপ্ (পৃ ৫০)—একটি সংস্কৃত ছন্দোবর্গের নাম। যে সকল সংস্কৃত ছন্দের প্রত্যেকপাদে অর্থাৎ চতুর্থাংশে আটটি করে স্বরাক্ত বর্ণ থাকে তাদেরই সাধারণ নাম অনুষ্টুপ্। অনুষ্টুপ্‌ ছন্দের দুই শ্রেণী। এক শ্রেণীর অনুষ্টুপ্ ছন্দে লঘুগুরুভেদে প্রত্যেক বর্ণের রূপ নির্দি‌ষ্ট থাকে। অন্য শ্রেণীর ধ্বনিবিন্যাস অপেক্ষাকৃত স্বাধীন। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর ছন্দসমূহকে বলা হয় অনুষ্টুপ্-বক্ত্র বা শুধু বক্ত্র। বক্ত্রশ্রেণীর সব চেয়ে বেশি প্রচলিত ও পরিচিত বিশেষ ছন্দটির নাম পথ্যাবক্ত্র। বাংলায় পয়ারের যে স্থান, সংস্কৃতে পথ্যাবক্ত্রের সেই স্থান। এই ছন্দের নিয়ম এই— পঞ্চম বর্ণ সব পাদেই লঘু এবং ষষ্ঠ বর্ণ সব পাদেই গুরু; সপ্তম বর্ণ প্রথম ও তৃতীয় পাদে গুরু, কিন্তু দ্বিতীয় ও চতুর্থ পাদে লঘু; অন্যান্য বর্ণের লঘুত্ব-গুরুত্ব নিয়মিত নয়। ৫০ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত দৃষ্টান্তটির ছন্দোবিশ্লেষ হচ্ছে এ-রকম।—