দ্বিপদী—যে ছন্দোবন্ধের প্রতিপংক্তিতে পদসংখ্যা অর্থাৎ অর্ধযতির বিভাগসংখ্যা দুই, তাকেই বলা যায় দ্বিপদী। ত্রিপদী-চৌপদীর ন্যায় দ্বিপদীও প্রকৃতিভেদে ত্রিবিধ: সাধু ছন্দের অক্ষরগোনা, প্রাকৃত-বাংলার সিলেব্ল্গোনা এবং মাত্রাবৃত্তের কলাগোনা।
দ্বিপদীরই প্রকারবিশেষের প্রচলিত নাম পয়ার। যে দ্বিপদীর প্রথম পদে আট এবং দ্বিতীয় পদে ছয় মাত্রা, তাকেই বলা হয় পয়ার। পয়ারের প্রথম পদে দুই পর্ব এবং দ্বিতীয় পদে দেড় পর্ব; প্রতিপর্বে চার মাত্রা এবং প্রতিউপপর্বে দুই মাত্রা। এই জন্যই রবীন্দ্রপরিভাষায় পয়ারকে সমমাত্রার ছন্দ, দুইবর্গ-মাত্রার ছন্দ, দ্বৈমাত্রিক ভূমিকার ছন্দ ইত্যাদি নাম দেওয়া হয়েছে।
পয়ার অক্ষরগোনা, সিলেব্ল্গোনা ও কলাগোনা, এই তিন রকমই হতে পারে। দ্রষ্টব্য ‘পয়ার’।
যে-সব দ্বিপদী দুইমাত্রা-উপপর্ব নিয়ে গঠিত নয়, তাদের শুধু কলাগোন। রূপই হয়, অন্য রূপ আজকাল স্বীকৃত হয় না।
সকল: বেলা | কাটিয়া: গেল ||
বিকাল: নাহি | যায়।
দুই ছত্রে লেখা হলেও এখানে ছন্দের পংক্তি একটাই (পৃ ১০৭-০৮)। পংক্তিটা দ্বিপদী; প্রত্যেক পদ তিন-দুই মাত্রার বিষম পর্ব নিয়ে গঠিত, শেষ পদ খণ্ডিত। এ রকম ছন্দের কলাগোনা রূপই চলে, অক্ষরগোনা কিংবা সিলেব্ল্গোনা রূপ অচল। আরএকটা দৃষ্টান্ত (পৃ ৭১) এই।—
তরণী বেয়ে শেষে | এসেছি ভাঙা ঘাটে।
এটা তিন-দুই-দুই মাত্রার বিষমপর্বিক একপদী। এরও অক্ষরগোনা রূপ অচল। যেমন—
সায়াহ্ন অন্ধকারে | এসেছি ভগ্ন ঘাটে।