পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৫১

পংক্তি বলা হয় (পৃ ১২২)। অর্থাৎ প্রবহমান বন্ধে পূর্ণযতির বিভাগকে পংক্তি বলা হয় না, কেননা ভাবের প্রয়োজনে পূর্ণযতিনির্দিষ্ট পংক্তিসীমাকে অতিক্রম করে যাওয়াই এই বন্ধের বৈশিষ্ট্য। এই জন্যই প্রবহমানতার নাম দেওয়া হয়েছে পংক্তিলঙ্ঘন (পৃ ১৫৬)। এই বৈশিষ্ট্যের কথা স্মরণ করেই রবীন্দ্রনাথ অমিত্রাক্ষর ছন্দকে পংক্তিলঙ্ঘক নামে অভিহিত করেছেন।

 পংক্তি বোঝাতে রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন স্থলে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেছেন। যথা— অবয়ব, চাল, পদ, প্রদক্ষিণ, রূপকল্প।

 পদ—পারিভাষিক অর্থে পদ মানে অর্ধ যতিনির্দিষ্ট ছন্দোবিভাগ। দ্বিপদী, ত্রিপদী, চৌপদী প্রভৃতি শব্দে পদ কথাটি পারিভাষিক অর্থেই প্রযুক্ত হয়। পয়ার ছন্দের প্রতিপংক্তি অর্ধযতির দ্বারা দুই পদে বিভক্ত (পৃ ১০)। অর্থাৎ পয়ারপংক্তি হচ্ছে আসলে দ্বিপদী। ত্রিপদীর প্রতিপংক্তি তিন পদে বিভক্ত (পৃ ১২)। চৌপদীতে চার পদ (পৃ ১১)। ‘প্রথম শীতের মাসে···হি হি করে কাঁপে গাত্র’ এই পংক্তিটিকে ‘আট মাত্রার ঝোঁক’ দিয়েই পড়া যাক আর ‘ছয় মাত্রার কায়দায়’ই পড়া যাক, এই পংক্তিটি যে চৌপদী তাতে সন্দেহ নেই; কারণ উভয় রীতিতেই এটি তিনটি অর্ধ যতির দ্বারা চার ভাগে বিভক্ত হয়। এই প্রসঙ্গে সহজপাঠ প্রথম ভাগের একটি কবিতার (সপ্তম পাঠ) ছন্দও উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘এ ছন্দটি দুই মাত্রায় অথবা তিন মাত্রায় পড়া যায়’। দুই মাত্রা, যথা—

কাল | ছিল | ডাল | খালি।
আজ | ফুলে | যায় | ভরে।

এ হচ্ছে উপপর্ব-বিভাগ, প্রতিউপপর্বে দুই মাত্রা। অর্থাৎ আসলে এটি চতুর্মাত্রপর্বিক ছন্দ। এখানে পর্ববিভাগ না দেখিয়ে উপপর্ববিভাগ দেখানো হয়েছে। তিন মাত্রা, যথা—