অর্থাৎ পূর্ণযতির বিভাগ বোঝাতে তিনি সাধারণত পদ শব্দই ব্যবহার করেছেন (পৃ ১০৩, ১০৭)।
পদ ও চরণ এই দুটি সমার্থক শব্দকে বিভিন্নার্থে প্রয়োগ করা সংগত নয়। আর, পদ শব্দটিকেও একই সঙ্গে অর্ধযতির বিভাগ ও পূর্ণযতির বিভাগ এই দুই অর্থে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় নয়। ত্রিপদী চৌপদী প্রভৃতি সর্বস্বীকৃত পারিভাষিক কথায় পদ শব্দের যা অর্থ, তাই স্বীকার্য।
পয়ার (পৃ৭০-৭১)—যে ছন্দোবন্ধের পংক্তি আট মাত্রা ও ছয় মাত্রার দুই পদ নিয়ে গঠিত তার প্রচলিত পারিভাষিক নাম পয়ার। পয়ারপংক্তি দ্বিপদী, আট মাত্রার পরে অর্ধযতি। আধুনিক কালে আট ও দশ মাত্রার দীর্ঘ পয়ার রচনার রীতি দেখা দিয়েছে (পৃ ৪৬, ৬৯)। দ্বিজেন্দ্রনাথের স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্যে (১৮৭৫) এই দীর্ঘ দ্বিপদীর প্রয়োগ দেখা যায়। কিন্তু আঠার মাত্রার ‘মহাপয়ার’ অর্থাৎ দীর্ঘ দ্বিপদী ‘দ্বিজেন্দ্রনাথের সৃষ্টি’ (পৃ ১২০) এবং স্বপ্নপ্রয়াণেই ‘এর প্রথম প্রবর্তন দেখা গেছে’ (পৃ ৪৬), এ কথা স্বীকার্য নয়। রঙ্গলালের পদ্মিনী-উপাখ্যান কাব্যেও (১৮৫৮) এই মহাপয়ারের দৃষ্টান্ত আছে। রবীন্দ্রনাথ সম্ভবত এই ছন্দ রচনার প্রবর্তনা পেয়েছিলেন স্বপ্নপ্রয়াণ থেকেই এবং তিনিই এটিকে সুপ্রচলিত করেছেন।
প্রকৃতিভেদে পয়ার ত্রিবিধ। প্রথম, সাধু ছন্দের ‘অক্ষরগোনা’ পয়ার। দৃষ্টান্ত—সতত হে নদ তুমি ইত্যাদি (পৃ ১৪২)। এই অক্ষরগোনা পয়ারের বহু দৃষ্টান্ত আছে গ্রন্থের নানা অধ্যায়ে। এ ছন্দে এক ‘অক্ষরে’ এক মাত্রা ধরা হয়। দ্বিতীয়, ছড়া বা লোকসাহিত্যের ‘মাত্রাগোনা’ পয়ার। দৃষ্টান্ত—এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা ইত্যাদি (পৃ ১৪৩)। এ ছন্দে প্রত্যেক সিলেব্ল্কেই এক মাত্রা বলে গণ্য করা হয়। শব্দের হসন্ত বর্ণকে বাদ দিয়ে গণনা করলে তার সিলেব্ল্-সংখ্যাই পাওয়া যায়া ‘এপার্’ শব্দে দুই সিলেব্ল্, সুতরাং দুই মাত্রা। এটাই লৌকিক