পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬২
ছন্দ

 শুধু ধ্বনিসংকোচের অবকাশ নয়, ধ্বনিপ্রসারের অবকাশ অর্থেও ফাঁক শব্দের প্রয়োগ আছে (পৃ ৬২)। এই অর্থটা প্রাকৃত-বাংলা ছন্দের অর্থাৎ লৌকিক ছন্দের সম্পর্কেই প্রযোজ্য। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, এ ছন্দ হচ্ছে আসলে ‘তিন মাত্রার ছন্দ।...এর প্রত্যেক পা ফেলার লয় হচ্ছে তিনের’। অর্থাৎ তাঁর মতে এটি হচ্ছে তিনমাত্রা-উপপর্বের ছন্দ। এখানে ‘পা-ফেলা’ বা পদক্ষেপ মানে উপপর্ব। কিন্তু এ ছন্দে প্রতিপর্বে প্রত্যক্ষত তিন মাত্রা পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে মাত্রার অভাব দেখা যায়। যেমন—

বৃষ্টি | পড়ে- | টাপুর | টুপুর | নদেয় | এল- | বা-ন।

এখানে তিনটি উপপর্বে এক মাত্রা কম দেখা যায়। কিন্তু আবৃত্তির টানে ওই তিন জায়গায় স্বরধ্বনির প্রসার ঘটে, ফলে মাত্রার অভাব পূর্ণ হয়ে যায়। ধ্বনিপ্রসারের এই অবকাশকে বলা হয়েছে ফাঁক।

 রবীন্দ্রনাথের মতে বাংলার প্রাকৃত ছন্দের ‘প্রত্যেক’ পা-ফেলার লয় হচ্ছে তিনের (পৃ ৬২)। কিন্তু অন্যত্র তার বিপরীত কথাই বলেছেন (পৃ ৬৩, ৮৫)। যেমন—

হারিয়ে ফেলা | বাঁশি আমার | পালিয়েছিল | বুঝি
লুকোচুরির | ছলে।

এখানে প্রত্যেক উপপর্বে তিন মাত্রা গণনা করা হয় নি। এমন কি, এটিকে উপপর্বেও বিভক্ত করা হয় নি; করা হয়েছে পর্ববিভাগ। তা ছাড়া এখানে ‘যতির মাত্রা’ ও ধরা হয়েছে অনেকটা সাধু পয়ারের পদ্ধতিতে (পৃ ১২০)।

আমি | যদি | জন্ম | নিতেম | কালি | দাসের | কালে।

এটা উপপর্বেই বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক উপপর্বেই তিন মাত্রা আছে বলে স্বীকৃত হয় নি (পৃ ২১৭)। সুতরাং বাংলার প্রাকৃত ছন্দকে ‘তিনমাত্রার ছন্দ’ বলা কঠিন। যা হক, এ ছন্দে রবীন্দ্রনাথ যে ফাঁক