পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৬৩

অর্থাৎ ধ্বনিপ্রসার বা মাত্রাসংযোগের অবকাশ আছে বলে মনে করেন সেটুকুই লক্ষণীয়।

 বাংলা লৌকিক ছন্দের এই ফাঁকগুলিকে হসন্ত বর্ণ দিয়ে অনায়াসেই পূর্ণ করা যায়। এ রকম ‘বেফাঁক’ লৌকিক ছন্দের দৃষ্টান্তও তিনি রচনা করে দেখিয়েছেন (পৃ ৬৪)। পূরবী কাব্যের ‘বিজয়ী’ কবিতাটিতেও বেফাঁক রচনার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় (পৃ ২১৭-১৮)।

বিহঙ্গগান | শান্ত তখন | অন্ধরাতের | পক্ষছায়ে।

কিন্তু কবিতাটির সর্বত্র তার বেফাঁক প্রকৃতি বজায় থাকেনি। মহুয়া কাব্যের ‘অর্ঘ্য’ কবিতাটিতে লৌকিক ছন্দের বেফাঁক প্রকৃতি সর্বত্র অব্যাহত আছে। ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ ইত্যাদি ছড়াটির ‘তিন কন্যে’ পর্বটাকে রবীন্দ্রনাথ যে-ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন (পৃ ৬২), তা না করে ‘তি-ন | কন্যে’ এ-ভাবেও বিশ্লেষণ করা চলত। যা হক, এটিকে তিনি বেফাঁক পদ্ধতিতেও রূপান্তরিত করেছেন (পৃ ৬৩)। তার একটি পর্ব হচ্ছে ‘বিয়ের বাসরে’। এই পর্বটিতে লৌকিক ছন্দের ভঙ্গি অব্যাহত আছে বলা যায় না। এ ছড়াটার আরএক রূপান্তর আছে ১৯২ পৃষ্ঠায়। সেটি সম্বন্ধেও এই মন্তব্যই প্রযোজ্য। ‘শিব ঠাকুরের বিয়ের লগ্নে’ লিখলে ওই ভঙ্গি বজায় থাকত। ‘বিয়ের বাসরে’ এবং ‘শিবু ঠাকুরের বিবাহ হচ্ছে’ থাকলে এই দৃষ্টান্ত-দুটিকে লৌকিক না বলে মাত্রাবৃত্ত বলাই সংগত হবে। রামপ্রসাদের ‘মা আমায় ঘুরাবি কত’ ইত্যাদি গানটির যে বেফাঁক চেহারা দেখানো হয়েছে (পৃ ৬৩) তাও লৌকিক নয়, ছয়মাত্রা-পর্বের মাত্রাবৃত্ত। ‘আমার সকল কাঁটা ধন্য করে’ ইত্যাদি চলতি ছন্দের দৃষ্টান্তটি যে দুটি রূপে পরিবর্তিত হয়েছে (পৃ ৭), তার প্রথমটি ‘মাত্রাবৃত্ত’, দ্বিতীয়টি ‘সাধু’। এগুলিকে বেফাঁক লৌকিক ছন্দের দৃষ্টান্ত বলা যায় না। এই প্রসঙ্গে ‘টুমুস্ টুমুস্ বাদ্যি বাজে’ ছড়াটাও স্মরণীয় (পৃ ২০২)।