সংগীতশাস্ত্রে ফাঁক শব্দের একটা পারিভাষিক অর্থ আছে। গানে তালের শেষ ঝোঁক বা প্রস্বরকেই বলা হয় ‘ফাঁক’ (পৃ ৯৮)[১]। ছন্দের আলোচনায় ফাঁকের এই পারিভাষিক অর্থ প্রযুক্ত হয় না।
বক্ত্র (পৃ ১৯৯)— অনুষ্টুপ্বর্গের পথ্যাবক্ত্র ছন্দে প্রতিপাদের শেষ চার বর্ণের লঘুত্বগুরুত্ব নির্দিষ্ট নিয়মের অধীন, প্রথম চার বর্ণ অনিয়মিত। তাই ‘অপরং ভবতো জন্ম’ এবং ‘বহূনি মে ব্যতীতানি’, এই দুটি পদের শেষ চার বর্ণের লঘুত্বগুরুত্বক্রমে সমতা আছে, আর প্রথম চার বর্ণের বিন্যাসক্রমে সমতার অভাব ঘটেছে। দ্বিতীয়টির সঙ্গে সমতা রাখতে হলে প্রথমটির রূপ হত ‘অপার ভাবতো জন্ম’। দ্রষ্টব্য ‘অনুষ্টুপ্’।
বিষমমাত্রার ছন্দ (পৃ ১৫, ৩৬)—যে ছন্দের পর্ব তিন মাত্রা ও দুই মাত্রার দ্বিবিধ উপপর্ব নিয়ে গঠিত, তাকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন বিষমমাত্রার ছন্দ। দ্রষ্টব্য ‘অসমমাত্রার ছন্দ’।
তিন-দুই মাত্রার উপপর্ব নিয়ে গঠিত বিষমমাত্রার ছন্দের বিস্তার ও বৈচিত্র্য ঘটানো যেতে পারে নানা ভাবে (পৃ ১৩৩)। যথা—
শিমুল: রাঙ৷: রঙে | চোখেরে: দিল: ভরে।
এখানে প্রত্যেক পর্বে তিন-দুই-দুই মাত্রার তিনটি উপপর্ব।
তটের বুকে লাগে | জলের ঢেউ | তবে সে কলতান | উঠে,
বাতাসে বন-সভা | শিহরি কাঁপে | তবে সে মর্মর | ফুটে।
এখানে শুধু উপপর্ব নয়, পর্বের বিষমতাও লক্ষণীয়। আরও বৈচিত্র্য আছে স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্যে। রবীন্দ্রপরিভাষায় এ সমস্তই বিষমমাত্রার ছন্দ বলে স্বীকার্য। বিষমমাত্রা ছন্দের আরও বৈচিত্র্যের দৃষ্টান্ত আছে ৪২-৪৩
- ↑ এটাই গানের ছন্দের মূলনিয়ম। কিন্তু অনেক তালে তার ব্যতিক্রম দেখা যায় (কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়-কৃত ‘গীতসূত্রসার’, তৃতীয় সং, পৃ ১৫৫)।