পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৬৫

পৃষ্ঠায়। ‘চাহিছ বারে বারে | আপনারে | ঢাকিতে’, এই দৃষ্টান্তটি মানসী কাব্যের ‘ছিলাম নিশিদিন | আশাহীন | প্রবাসী’ ইত্যাদি ‘বিরহানন্দ’-নামক রচনাটির অবিকল প্রতিরূপ। কবি মানসীতে এটির সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “এই ছন্দে যে যে স্থানে ফাঁক, সেইখানে দীর্ঘ যতিপতন, আবশ্যক।”

 ৩৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘দুই-তিনের যোগে বিষমমাত্রায় ছন্দ’। এখানে দুই ও তিন মাত্রার চলনের যোগ বা সমাবেশের কথা বলাই অভিপ্রেত, বিন্যাসক্রমের কথা নয়। ‘যতই চলে’ ইত্যাদি দৃষ্টান্তটির বিন্যাসক্রম হচ্ছে তিন-দুই ৷

 ভুজঙ্গপ্রয়াত—এটি একটি সংস্কৃত ছন্দ। এই ছন্দের প্রতিপদে লঘু-গুরু-গুরু (৴ — —) এই পর্যায়ক্রমে বিন্যস্ত বারটি বর্ণ থাকে। রবীন্দ্রনাথ এ ছন্দের নাম উল্লেখ করেন নি, কিন্তু বাংলায় সংস্কৃত ছন্দের প্রসঙ্গে ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্য (শিবের দক্ষালয়যাত্রা) থেকে একটি দৃষ্টান্ত উদ্‌ধৃত করেছেন (পৃ ৫)। যথা—

৴ — — ৴ — — ৴ — — ৴ — —
ম হারুদ্রবেশে মহাদেব সাজে।

এখানে মূলপাঠ একটু বদলে গেছে, মূলে আছে ‘মহারুদ্ররূপে’। কিন্তু তাতে ছন্দে কোনো ত্রুটি ঘটে নি।

 মদিরা (পৃ ৪৭)—এটিও একটি সংস্কৃত ছন্দ। এই ছন্দের প্রত্যেক পদে আটটি করে গণ বা পর্ব থাকে। প্রত্যেক গণের প্রথমে একটি গুরুধ্বনি ও পরে দুটি লঘুধ্বনি থাকে এবং অষ্টম গণে থাকে একটিমাত্র গুরুধ্বনি, এই হচ্ছে এ ছন্দের নিয়ম। এ ছন্দের দৃষ্টান্ত ও বিশ্লেষণ গ্রন্থমধ্যে দ্রষ্টব্য। মদিরা ছন্দের বিন্যাসক্রম (— ৴ ৴) ভুজঙ্গপ্রয়াতের বিন্যাসক্রমের (৴ — —) বিপরীত। গ্রীক ছন্দপরিভাষায় এই দুই ছন্দের ধ্বনিবিন্যাসপদ্ধতি যথাক্রমে dactyl ও anti-Bacchic নামে পরিচিত।