পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭০
ছন্দ

ফেলছে এবং আটের মাত্রায় ঘুরে আসছে’। এই উক্তির দ্বিতীয়াংশটির মানে আটটি পদক্ষেপে এর প্রদক্ষিণ। অর্থাৎ প্রদক্ষিণের মাত্রা পদক্ষেপ। চলন ও পদক্ষেপ একার্থক, মানে পর্ব। তেমনি চাল ও প্রদক্ষিণ, দুটোরই মানে পংক্তি। সুতরাং পর্বই পংক্তির মাত্রা বলে গণ্য হয়েছে। উদ্‌ধৃত দৃষ্টান্তটিতে আটটি পর্ব-মাত্রায় এক পংক্তি সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু পর্বের অর্থাৎ চলন বা পদক্ষেপের মাত্রা কি? শরদ, কুসুম, মধুপ প্রভৃতি যুগ্মধ্বনিহীন শব্দে তিন মাত্রা ধরা হয়েছে। অতএব বলতে হবে এ ক্ষেত্রে একটি অযুগ্ম বা লঘু ধ্বনির উচ্চারণকাল অর্থাৎ এক ‘কলা’ই এক মাত্রা বলে গণিত হয়েছে। যুগ্ম বা গুরু ধ্বনিতে দুই কলা, অতএব দুই মাত্রা। ‘চন্দ’ শব্দে একটি গুরুধ্বনি (চন্) ও একটি লঘুধ্বনি (দ), অতএব তিন কলা-মাত্রা। ‘মালতি’ শব্দের ‘মা’এর দীর্ঘ উচ্চারণ, অতএব গুরু; তাই ‘মালতি’ শব্দে চার কলামাত্রা গণনীয়। ‘ভোরনী’ শব্দের ‘ভো’ এবং ‘নী’ও গুরু; অধিকন্তু তার শেষে একটি অনুচ্চারিত মাত্রাও গণনীয়। এই হিসাবে উপরের দৃষ্টান্তটির প্রত্যেক পর্বে (চলনে বা পদক্ষেপে) পাওয়া যাবে ছয়টি করে কলামাত্রা। এর পুরো পরিচয় এই যে, ছয় কলা-মাত্রায় এর পর্ব এবং আট পর্ব-মাত্রায় এর পংক্তি। রবীন্দ্রপরিভাষায় এর চাল বা প্রদক্ষিণের মাত্রা আট এবং চলন বা পদক্ষেপের মাত্রা ছয় (পৃ ৩৫, ৪১)। মনে রাখা প্রয়োজন—চালের মাত্রা চলন, ভাষান্তরে প্রদক্ষিণের মাত্রা পদক্ষেপ, অর্থাৎ পংক্তির মাত্রা পর্ব, আর চলন বা পদক্ষেপের মাত্রা কলা। যার সাহায্যে পরিমাপ করা যায় তারই নাম মাত্রা। এখানে পংক্তি পরিমিত হয়েছে পর্বের সাহায্যে, সুতরাং পর্বই তার মাত্রা; এবং পর্ব পরিমিত হয়েছে কলার সাহায্যে, সুতরাং কলাই তার মাত্রা

 শুধু পর্বকে নয়, রবীন্দ্রনাথ স্থলবিশেষে উপপর্বকেও মাত্রা বলে ধরে