পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৭১

নিয়েছেন। কেননা, অনেক সময় তিনি উপপর্বকেই ছন্দের মাপকাঠি বলে গণ্য করেছেন। তাই যখন বলেন ‘তিনের মাত্রার ছন্দ’ (পৃ 88), তখন বুঝতে হবে তিনকলা-পরিমিত উপপর্বের ছন্দ। এখানে মাত্রা মানে উপপর্ব। যখন বলেন ‘তিনের ছন্দ’ (পৃ ৩৬, ৪৪) তখন সেই ছন্দকেই বোঝায় যার প্রতি ‘মাত্রা’য় (এস্থলে, উপপর্বে) তিন কলা।

 দেখা গেল এই গ্রন্থে পর্ব-মাত্রা, উপপর্ব-মাত্রা ও কলা-মাত্রা, এই তিন রকম মাত্রাই স্বীকৃত হয়েছে। তা ছাড়া সিলেব্‌ল্-মাত্রার কথাও পাওয়া যায় নানা স্থানে। “ফল শব্দ বস্তুত এক মাত্রার কথা। অথচ সাধু বাংলাভাষার ছন্দে ইহাকে দুই মাত্রা বলিয়া ধরা হয়” (পৃ ৫-৬)। এর মানে ফল শব্দ এক সিলেব্‌ল্‌এর কথা, কিন্তু সাধু বাংলার ছন্দে এটিকে দুই কলা বলে ধরা হয়। অর্থাৎ সাধু ছন্দে অবস্থাভেদে এক সিলেব্‌ল্‌এও দুই মাত্রা ধরা যায়, কেনন। কলা-ই তার মাত্রা। কিন্তু অ-সাধু বা, প্রাকৃত বাংলার ছন্দে এক সিলেব্‌ল্‌এই এক মাত্রা (পৃ ১৮)। যেমন—

কই্ | পা | লঙ্ | ক || কই্ | রে | কম্ | বল্।

এখানে সিলেবল্‌ই মাত্রা বলে স্বীকৃত। অর্থাৎ অ-সাধু বাংলার ছন্দ হচ্ছে সিলেব্‌ল্-মাত্রার ছন্দ। ‘কই’ শব্দে এক সিলেব্‌ল্‌ এবং অ-সাধু ছন্দে এটি একমাত্রা বলেই গণ্য। যা হক, ফল কই প্রভৃতির ন্যায় একসিলেব্‌ল্‌এর শব্দকেই বলা হয়েছে ‘ঐকমাত্রিক’ (monosyllabic) ধ্বনি (পৃ ১২৮)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘যে-ছন্দগুলি বাংলার প্রাকৃত ছন্দ, অক্ষর গণনা করে তাদের মাত্রা নয়’ (পৃ ১৯২)। বস্তুত তাদের মাত্র। সিলেব্‌ল্ গণনা করে। “চলতি ভাষার কাব্য, যাকে বলে ছড়া,•••সেটা পয়ার হলেও অক্ষরগোনা পয়ার হবে না, সে হবে মাত্রাগোনা পয়ার” (পৃ ১৪২)। এখানে মাত্রা মানে সিলেব্‌ল্‌ মাত্রাগোনা