পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৪
ছন্দ

‘ইহাতে চোদ্দটি অক্ষরে চোদ্দ মাত্রা’। শয্যা কই বস্ত্র কই, দৃষ্টান্তটির বিশ্লেষণেও দেখা যায় আট অক্ষরে আট মাত্রা ধরা হয়েছে (পৃ ১৮)। এক অক্ষরে এক মাত্রা ধরা, এটা হচ্ছে প্রচলিত রীতি। তদনুসারে বস্ • ত্র না লিখে ব • স্ত্র লিখলেই ঠিক হত। কেননা প্রচলিত রীতি অনুসারে ‘হলন্তই [মানে স্বরান্ত] হোক, হসন্তই হোক আর যুক্তবর্ণ ই হোক এই ছন্দে সকলেরই সমান মাত্রা’ (পৃ ৪৯)। সুতরাং ‘বস্’ লিখলে তাতেই দুই মাত্রা ধরতে হয়।

তব চিত্তগগনের | দূর দিক্‌সীমা।

“এখানে ‘দিক্’ শব্দের ক্ হসন্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে একমাত্রার পদবি দেওয়া গেল” (পৃ ৮০)। কেননা, এটা অক্ষরমাত্রার ছন্দ। রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন চলতি ভাষার পয়ার ‘অক্ষরগোনা’ পয়ার নয় (পৃ ১৪২) কিংবা “যে-ছন্দগুলি বাংলার প্রাকৃত ছন্দ, অক্ষর গণনা করে তাদের মাত্রা নয়” (পৃ ১৯২), তখনই বুঝতে হবে তিনি সাধু বাংলার ছন্দকে অক্ষরমাত্রার ছন্দ বলেই ধরে নিচ্ছেন। কেননা, ‘সাহিত্যিক কবুলতিপত্রে সাধু ভাষায় অক্ষর এবং মাত্রা এক পরিমাণের বলে গণ্য হয়েছে’ (পৃ ১৪২)।

 কিন্তু এই বিষয়ে তাঁর মনের দ্বিধার পরিচয়ও আছে এ গ্রন্থে। “আমাদের প্রত্যেক অক্ষরটিই যে বস্তুত একমাত্রার এ কথা সত্য নহে। যুক্ত বর্ণ[১] এবং অযুক্ত বর্ণ কখনই একমাত্রার হইতে পারে না।...‘পুণ্যবান্’ শব্দটি ‘কাশীরাম’ শব্দের সমান ওজনের নহে” (পৃ ৪)। অন্যত্র আছে “অক্ষরের সংখ্যা গণনা করে ছন্দের ধ্বনিমাত্রা গণনা বাংলায় চলে না” (পৃ ৬২), এবং “আক্ষরিক ছন্দ বলে কোনো অদ্ভুত পদার্থ বাংলায় কিংবা অন্য কোনো ভাষাতেই নেই, অক্ষর ধ্বনির চিহ্নমাত্র” (পৃ ৬১)।

  1. বর্ণ ও অক্ষর সমার্থক শব্দ। সুতরাং অক্ষরমাত্রা কথাটার পরিবর্তে বর্ণমাত্রা কথাটাও ব্যবহার করা যেতে পারে।