পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৬
ছন্দ

এই বিশ্লেষণটা উচ্চারণসংগত এবং এজন্যই স্বীকার্য। অক্ষরসংখ্যায় হিসাবটা উচ্চারণসংগতও নয়, যুক্তিসংগতও নয়। অতএব অক্ষর সংখ্যাগত বিশ্লেষণ স্বীকার্য নয়।

 তা হলে অক্ষরমাত্রাও স্বীকার্য নয়। অক্ষরমাত্রা না হলে সাধু ছন্দের হিসাব হবে কোন্ মাত্রার গণনায়? রবীন্দ্রনাথের ছন্দোবিশ্লেষণপ্রণালী লক্ষ্য করলে বোঝা যায় কলামাত্রা গণনাই তাঁর অভিপ্রেত। তবে সাধারণ কলামাত্রার ছন্দের সঙ্গে এই বিশিষ্ট কলামাত্রার ছন্দের একটা পার্থক্য আছে। সাধারণ কলামাত্রার ছন্দে সমস্ত যুগ্মধ্বনিই প্রসারিত ও দুইকলা-পরিমিত বলে গণ্য হয়। কিন্তু আলোচ্যমান বিশিষ্ট কলামাত্রার ছন্দে সব যুগ্মধ্বনির কলাপরিমাণ সমান নয়। কোথাও তা সংকুচিত এবং এককলা-পরিমিত, আবার কোথাও তা প্রসারিত এবং দুইকলা-পরিমিত। সাধারণত শব্দের অন্তে অবস্থিত হলে প্রসারিত এবং অন্যত্র সংকুচিত হয়; কিন্তু তার ব্যতিক্রমও আছে। এই বিষয়ে বাংলা ভাষার স্বভাবসীমার মধ্যে কবির যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে। নানা প্রসঙ্গেই তা দেখানো হয়েছে। যেমন—

চিম্‌নি ভেঙে গেছে দেখে | গিন্‌নি রেগে খুন,
ঝি বলে আমার দোষ | নেই ঠা-ক্‌রুন ৷

চিম্ গিন্‌ ঠাক্, তিনটিই শব্দের আদিতে অবস্থিত। অথচ প্রথম দুটি সংকুচিত এবং তৃতীয়টি প্রসারিত (পৃ ৭৭)। আবার

চি-ম্‌নি ফেটেছে দেখে | গৃহিণী সরোষ,
ঝি বলে ঠাক্‌রুন মোর | নাই কোনো দোষ।

এখানে চিম্ প্রসারিত এবং ঠাক্ সংকুচিত।

তব চিত্তগগনের | দুর দিক্‌সীমা।

এবং

মনের আকাশে তার | দিক্‌সীমানা বেয়ে।