পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৭৭

প্রথম দিক্ ধ্বনিটা প্রসারিত ও দুইকলা-পরিমিত; দ্বিতীয়টা সংকুচিত ও এককলা-পরিমিত (পৃ ৮০)।

 যুগ্মধ্বনির এই সংকোচন প্রসারণের ফলেই অক্ষরসংখ্যার হিসাবে এই ছন্দের পরিমাপ সম্ভব নয়। উপরের চারটি দৃষ্টান্তের প্রত্যেক পংক্তির কলামাত্রার সংখ্যা চোদ্দ; কিন্তু অক্ষরমাত্রা স্বীকার করলে মাত্রার সমতা পাওয়া যাবে না।

 বিশিষ্ট কলামাত্রার ছন্দে যুগ্মধ্বনির সংকোচন ও প্রসারণ দুই-ই চলে একই সঙ্গে। তবে তাতে প্রসারণের চেয়ে সংকোচনের প্রবণতাই বেশি। এই সংকোচনক্ষমতাই এর বিশিষ্টতা। আর এই সংকোচনক্ষমতাকেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ‘শোষণশক্তি’ (পৃ ৩৮)। ফলে এ ছন্দেৱ নির্দিষ্ট পংক্তিসীমার মধ্যে সাধারণ কলামাত্রার তুলনায় অনেক বেশি যুগ্মধ্বনির স্থান দেওয়া যায়। প্রয়োজনমতো নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বহুসংখ্যক যুগ্মধ্বনিকে ধারণ করবার এই যে শক্তি, তাকে বলা হয়েছে ‘ভারবহনশক্তি’ (পৃ ১২৯), আর এজন্যই এ ছন্দকে বলা হয়েছে ‘গুরুভারবহ’ ছন্দ (পৃ ৬৯)।

 বাংলা ছন্দে পংক্তির শেষপর্ব অনেক সময়ই অপূর্ণ থাকে। অর্থাৎ ওই পর্বে নির্দিষ্টসংখ্যক ধ্বনিমাত্রা না বসিয়ে এক বা একাধিক মাত্রার অবকাশ রেখে দেওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ অনেক সময়ই এই অবকাশের মাত্রাসংখ্যাকে হিসাবের মধ্যে ধরেছেন এবং তাকে বলেছেন ‘অনুচ্চারিত মাত্রা’ বা ‘যতির মাত্রা’ (পৃ ৪১, ৪৬)। পয়ারে প্রতিপংক্তিতে চার পর্ব (বা পদক্ষেপ, পৃ ৩৫), প্রতিপর্বে চার মাত্রা, শেষপর্বে উচ্চারিত মাত্রা দুই, অনুচ্চারিত বা যতির মাত্রা দুই। এই হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের হিসাব। যদি পর্ববিভাগের কথা না বলে একেবারে পদবিভাগের কথা বলা হয় তবে বলতে হয় পয়ারের প্রতিপংক্তিতে দুই পদ (বা পদক্ষেপ, পৃ ৪১); প্রথম পদে আট মাত্রা, দ্বিতীয় পদেও তাই, দুটি অনুচ্চারিত বা যতির মাত্রা নিয়ে (পৃ ১০, ৭১)।