পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮০
ছন্দ

প্রাকৃতেও এই ছন্দের বহুল প্রয়োগ দেখা যায়। প্রাকৃত ছন্দশাস্ত্রে এ ছন্দকে বলা হয় গাহা অর্থাৎ গাথা।

 এই গ্রন্থে যে কয়টি প্রাকৃত ছন্দের উল্লেখ আছে সেগুলি সবই মাত্রাবৃত্তবর্গীয়। তার মধ্যে মালা ছন্দের (পৃ ১৫৭) দ্বিতীয়ার্ধ গাথার অর্থাৎ আর্যার অবিকল অনুরূপ (পৃ ২৩৪), সুতরাং চতুর্মাত্রপর্বিক। এ ছন্দের প্রথমার্ধের প্রথম ছত্রিশ কলার পর্ববিভাগ অনিয়মিত, অর্থাৎ এই অংশটিকে সুনিরূপিত পর্বে পর্বে বিভক্ত করা আবশ্যিক নয়। মাত্রাবৃত্তের মাত্রাসংখ্যাই সাধারণত নির্দিষ্ট থাকে, অক্ষরসংখ্যা থাকে অনির্দিষ্ট। মালা ছন্দের দ্বিতীয়ার্ধ সম্বন্ধে এ নিয়ম প্রযোজ্য, প্রথমার্ধ সম্বন্ধে নয়। প্রথমার্ধে অক্ষরসংখ্যা (একচল্লিশ) এবং মাত্রাসংখ্যা (পঁয়তাল্লিশ), দুই-ই নির্দিষ্ট আছে।

 গগনাঙ্গ ছন্দও মাত্রাবৃত্তবর্গের অন্তর্গত। অথচ এরও প্রতিপাদে অক্ষরসংখ্যা (কুড়ি) এবং মাত্রাসংখ্যা (পঁচিশ) নির্দিষ্ট আছে (পৃ ২৩৬)। এর প্রথমে থাকে একটি চার কলামাত্রার পর্ব। বাকি একুশ কলাকে চারকলার পর্বে বা পাঁচকলার পর্বে যেভাবে ইচ্ছা বিন্যস্ত করা চলে, কেবল পাদের মোট অক্ষরসংখ্যা ঠিক থাকা চাই এবং শেষ দুটি অক্ষর লঘুগুরুক্রমে বিন্যস্ত হওয়া চাই। গ্রন্থমধ্যে উদ্ধৃত দৃষ্টান্তটি চারকলার পর্বে বিভাজ্য (পৃ ২৩৬)। কিন্তু এটির তৃতীয় পাদে কিছু ত্রুটি আছে। ‘খুরাসাণ’ পাঠে চারকলার প্রথম পর্বটিই পাওয় যায় না। রস্তুত প্রাকৃতপৈঙ্গলের চারটি পাণ্ডুলিপিতে এবং দুইটি টীকায় পাঠ আছে ‘খুরসাণ’। বলা বাহুল্য ছন্দের প্রয়োজনে এই পাঠই গ্রহণীয়। পক্ষান্তরে ‘মুহিম লংঘিঅ’ অংশে এক কলার অভাব দেখা যায়। ‘মোহিঅ’ বা অনুরূপ কোনো পাঠ ধরলেই কোনো ত্রুটি থাকত না। কিন্তু পাঠান্তর বা টীকাগুলিতে এই ত্রুটি পুরণের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।