পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৬
ছন্দ

রীতির ছন্দেই ঋকারান্ত বর্ণের এই দ্বিবিধ প্রয়োগ চলে। বিশিষ্ট কলামাত্রিক বা দলমাত্রিক রীতির ছন্দে ঋকারান্ত বর্ণের বৈকল্পিকতা স্বীকার নিষ্প্রয়োজন। চিত্রা কাব্যের ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’ কবিতায় আছে—

মর্ত্যভূমি স্বর্গ নহে,
সে যে মাতৃভূমি,···স্বর্গে তব বহুক অমৃত।

এখানে মাতৃ ও অমৃত শব্দের উচ্চারণ লঘুপ্রযত্ন কি না সে বিচার অনাবশ্যক। বলা বাহুল্য এটা বিশিষ্ট কলামাত্রিক রীতির ছন্দ। সত্যেন্দ্রনাথের তীর্থসলিল কাব্যের স্বদেশ বন্দনা কবিতায় আছে—

স্বদেশ, আমার মাতৃভূমি,
স্বাধীনচেতার ধাত্রী তুমি,
সবে গাহি তোমার জয়-গান।

এখানে মাতৃ ও ধাত্রী শব্দ সমগোত্র ও সমমাত্রক; উভয়ত্রই ব্যঞ্জনসংঘাত সুস্পষ্ট। বলা বাহুল্য এটা দলমাত্রিক রীতির ছন্দ। ‘মাতৃভূমি’কে ‘মাত্রিভূমি’ রূপে উচ্চারণ করলে কোনো রীতির ছন্দেই রসনা ঠোকর খায় না।

 মালঝাঁপ'—পয়ারেরই প্রকারভেদ মাত্র। যে পয়ারবন্ধের প্রথম তিন পর্বে মিল থাকে, প্রাচীন পরিভাষায় তাকেই বলা হয় মালঝাঁপ। রবীন্দ্রনাথ এই নামটি ব্যবহার করেন নি, কিন্তু তার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন (পৃ ১১, ৩৮)। যথা—

বাজে তীর | পড়ে বীর | ধরণীর | পরে।

তিনি মনে করেন, এ ছন্দ ‘যুক্ত-অক্ষরের ভার সয় না’। কিন্তু প্রাচীন বাঙালি কবিরা মালঝাঁপ পয়ারেও যুক্তবর্ণের বোঝা চাপিয়ে দিতে দ্বিধা করতেন না। ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্য (দ্বিতীয় খণ্ড, কোটালের উৎসব) থেকে একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি।—