পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৮
ছন্দ

 যতি (পৃ ১৯৭)—ছন্দের ধ্বনিপ্রবাহ অবিচ্ছিন্ন নয়; সৌষম্যসৃষ্টির প্রয়োজনে তাকে কোনো বিশেষ পদ্ধতিতে সুনিয়মিতভাবে খণ্ডিত করা হয়। ওই খণ্ডনেরই পারিভাষিক নাম যতি। ছেদ, বিরাম, বিরতি প্রভৃতি যতিরই নামান্তর।

 বিরামের গুরুত্বভেদে যতির তারতম্য ঘটে। ‘পদ্যছন্দের প্রধান লক্ষণ পংক্তিসীমানায় বিভক্ত তার কাঠামো। নির্দিষ্টসংখ্যক ধ্বনিগুচ্ছে এক-একটি পংক্তি সম্পূর্ণ। সেই পংক্তিশেষে একটি করে বড়ো যতি’ (পৃ ১৫৩)। পংক্তিসীমায় অবস্থিত এই ‘বড়ে। যতি’কে বলা যায় ‘পুরো যতি’ (পৃ ১০০), অর্থাৎ পূর্ণযতি। উল্লিখিত প্রত্যেক ‘ধ্বনিগুচ্ছ’ অর্থাৎ পর্বের পরেও একটি করে যতি থাকে (পৃ ৬৩, ৭৪, ১৯৩)। এসব যতির গুরুত্ব পূর্ণযতির তুলনায় কম। তাই এ-রকম যতিকে বলা যায় লঘুযতি বা পর্বযতি। আরও এক রকম যতি আছে যার গুরুত্ব পূর্ণযতি ও লঘুযতির মধ্যবর্তী, তাকে বলা যায় ‘আধ। যতি’ (পৃ ১০০) বা অর্ধযতি। আঠার মাত্রার দীর্ঘপয়ারে আট মাত্রার পরে থাকে ‘একটি স্পষ্ট যতি’ (পৃ ১০২) এবং বাকি দশ মাত্রার পরে পূর্ণযতি। চোদ্দ মাত্রার সাধারণ পয়ারেও পংক্তির মাঝখানে অর্থাৎ আট মাত্রার পরে একটি করে যতি থাকে যা লঘুযতির চেয়ে অপেক্ষাকৃত ‘স্পষ্ট’ অথচ যার গুরুত্ব পূর্ণযতির সমান নয় (পৃ ৭০-৭১)। এই অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট যতিকেই বলা যায় অর্ধযতি।

 সাধারণ পয়ারপংক্তির পর্ব বা পদক্ষেপ চারটি (পৃ ৩৫)। যথা—

মহাভার | তের কথা || অমৃত স | মান ৷

পংক্তিশেষে পূর্ণযতি; প্রথম ও তৃতীয় পর্বের পরে লঘুযতি। দ্বিতীয় পর্বের পরবর্তী যতিটি প্রথম ও তৃতীয় যতির চেয়ে স্পষ্টতর অথচ তা পূর্ণযতির সমকক্ষ নয়। এই যতিটিই অর্ধযতি। পূর্ণযতির দ্বারা নির্দিষ্ট ছন্দোবিভাগেরই নাম পংক্তি। তেমনি অর্ধযতির বিভাগই হচ্ছে পদ।