পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯০
ছন্দ

চলন এবং তিন মাত্রার বিভাগকে বলা হয়েছে অসমমাত্রার চলন (পৃ ৩৫-৩৬)। এখানে চলন মানে উপপর্ব। এই চলন বা উপপর্ব নির্ণীত হয় যে ক্ষীণ বিরতির দ্বারা, তারই নাম উপযতি। যথা—

ফিরে: ফিরে | আঁখি: নীরে | পিছু: পানে | চায়।

এখানে প্রতি পূর্ণপর্বে দুই মাত্রার পরে উপযতি। প্রত্যেক পূর্ণপর্ব দুটি করে দুইমাত্রার উপপর্ব নিয়ে গঠিত। তুলনীয় ‘ধরণীর আঁখিনীর’ ইত্যাদির বিশ্লেষণ (পৃ ৩৮)।

নয়ন: ধারায় | পথ সে: হারায় | চায় সে: পিছন | পানে।

প্রতি পূর্ণপর্ব দুটি করে তিনমাত্রার উপপর্বে বিভক্ত। উপপর্ববিভাগ উপযতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শেষ উপপর্বটি অপূর্ণ।

যতই: চলে | চোখের: জলে | নয়ন: ভরে | ওঠে।

প্রতি পূর্ণপর্বে দুই উপপর্ব। প্রথমটি তিনমাত্রার, দ্বিতীয়টি দুইমাত্রার। এখানেও শেষ উপপর্বটি অপূর্ণ।

 লঘুযতির ন্যায় উপযতিও কখনও কখনও লুপ্ত হয়। দৃষ্টাত্ত পরে দ্রষ্টব্য (পৃ ২৯১)।

 এই গ্রন্থে তারতম্যভেদে যতির পূর্ণ অর্ধ লঘু ও উপ এই চার শ্রেণী প্রত্যক্ষত স্বীকৃত হয়নি। পরোক্ষ স্বীকৃতির প্রমাণ আছে। রবীন্দ্রনাথের ছন্দোবিভাজনপ্রণালী থেকেই সে প্রমাণ পাওয়া যায় পংক্তিশেষের বড়ো যতির কথা স্বতঃস্বীকার্য। পংক্তিমধ্যবর্তী স্পষ্টযতি বা অধর্যতির কথাও আছে এই গ্রন্থে (পৃ ১০২)।—

মন চায় | চলে আসে | কাছে ||
তবুও পা | চলে না।

পংক্তিশেষে পূর্ণযতি। তৃতীয় পর্বটি অপূর্ণ, তার পরেই স্পষ্ট- বা অর্ধ-যতি। আর প্রতিপর্বের পরবর্তী বিভাজনচিহ্ন লঘুযতির সূচক।