পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৯৩

 যুগ্মধ্বনি শব্দটিকে উল্লিখিত পারিভাষিক অর্থ থেকে ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করবার আশঙ্কা রয়েছে। এই গ্রন্থেও তার নিদর্শন আছে। ‘উদয়’ শব্দে দুই ধ্বনি (syllable), উ+দয়্; উ অযুগ্ম (open) এবং দয়্ যুগ্ম (closed)। ‘দিগন্ত’ শব্দে তিন ধ্বনি, দি+গন্+ত; দি ও ত অযুগ্ম এবং গন্ যুগ্ম। ‘উদয়’এর দয়্ শব্দান্তস্থিত এবং তার উচ্চারণ প্রসারিত, সুতরাং দুই মাত্রা। ‘দিগন্ত’ শব্দের গন্ শব্দমধ্যবর্তী এবং তার উচ্চারণ সংকুচিত, সুতরাং এক মাত্রা। ‘উদয়’ শব্দে অয়্ এবং ‘দিগন্ত’ শব্দে অন্ (পৃ ৫২-৫৩) উচ্চারণসম্মত ধ্বনিবিভাগ অর্থাৎ সিলেব্‌ল্ বলে গণ্য নয়। তা ছাড়া ‘যুগ্মধ্বনি শব্দটার পরিবর্তে ইংরেজি সিলেব্‌ল্ শব্দ ব্যবহার’ (পৃ ৫৩) করাও চলে না; কারণ সিলেব্‌ল্ শব্দ অযুগ্ম ও যুগ্ম উভয় প্রকার ধ্বনিকেই বোঝায়, শুধু যুগ্মধ্বনিকে নয়।

 যুক্তাক্ষর বোঝানো পারিভাষিক যুগ্মধ্বনি শব্দের অভিপ্রেত নয়। কিন্তু এই গ্রন্থের নানা স্থানেই যুগ্মধ্বনি শব্দটি যুক্তাক্ষর অর্থেই গৃহীত হয়েছে।

দুইজনে জুঁই তুলতে যখন
গেলেম বনের ধারে।

ইত্যাদি দৃষ্টান্তটিতে দুই্, জুঁই্, তুল্, খন্, লেম্, নের্ প্রভৃতি আশ্রিতান্ত ধ্বনিকেই বলা হয়েছে যুগ্মধ্বনি (পৃ ৫৬)। এটাই হচ্ছে এই পারিভাষিক শব্দটির অভিপ্রেত। বলা বাহুল্য দুই্, জুঁই্, তুল্ প্রভৃতি যুগ্মধ্বনিগুলি যুক্তাক্ষর নয়। কিন্তু অন্যত্র আছে ‘যুক্ত-অক্ষর অর্থাৎ যুগ্মধ্বনি’ (পৃ ৬৬)। এখানেই সংশয় দেখা দেয়। কেননা কোনো শব্দে যুক্তাক্ষর থাকলেও যুগ্মধ্বনি না থাকতে পারে, আবার যুক্তাক্ষর না থাকলেও যুগ্মধ্বনি থাকতে পারে। ছন্দ শব্দে যুক্তাক্ষর (ন্দ) ও যুগ্মধ্বনি (ছন্) দুই-ই আছে। কিন্তু ক্ষমা ও গ্লানি শব্দে যুক্তাক্ষর (ক্ষ, গ্লা) আছে, যুগ্মধ্বনি নেই। আবার শিউলি ও টোটকা শব্দে যুক্তাক্ষর নেই, কিন্তু যুগ্মধ্বনি (শিউ্,