পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৯৫

‘বাংলায় হসন্ত শব্দের পূর্ববর্তী স্বর দীর্ঘ হয়’ অর্থাৎ ‘প্রাক্‌হসন্ত স্বরকে দুই মাত্রার পদবি দেওয়া’ হয় (পৃ ৫৩)। যেমন জ-ল্ ও চাঁ-দ্ শব্দের অ এবং আ দুটি স্বরই দীর্ঘ অর্থাৎ দ্বিমাত্রক। শুধু বাংলায় নয়, সংস্কৃত এবং প্রাকৃতেও তাই। পিঙ্গলাদি সমস্ত প্রাচীন ছান্দসিকের মতেই যুক্তবর্ণের (তথা হস্ বর্ণের) পূর্ববর্তী বর্ণ গুরু অর্থাৎ দ্বিমাত্রক। যেমন— দি-ক্ ও চ-ন্দ্র শব্দের দি ও চ দ্বিমাত্রক। দিক্ শব্দের শুধু ইকার- বা দি-টুকুকে দ্বিমাত্রক বলে গণ্য না করে সমস্ত দিক্ ধ্বনিটাকেই দ্বিমাত্রক বলে গণ্য করা সংগততর, কেননা হসন্ত ক্ অংশটাও ওই দুইমাত্রাপরিমিত কালের মধ্যেই উচ্চারিত হয়। জল শব্দটা ইংরেজি মতে এক সিলেব্‌ল্ বটে, কিন্তু রুদ্ধ (closed) সিলেব্‌ল্; এবং বাংলা কলামাত্রা রীতির ছন্দে এটি দ্বিমাত্রক। কাশীরাম-এর ‘রাম’ও দ্বিমাত্রক। কারণ বিশিষ্ট কলামাত্রার ছন্দে শব্দের অন্তস্থিত রুদ্ধদল দ্বিমাত্রকই হয়। তাই উদয় শব্দের দয়্‌ দ্বিমাত্রক; কিন্তু দিগন্ত শব্দের গন্ একমাত্রক, কারণ এটি শব্দান্তস্থিত নয়। ঐ অর্থাৎ অই্ দ্বিমাত্রক, কিন্তু শুভ্র শব্দের শুভ্ এবং শঙ্খ শব্দের শঙ্ একমাত্রক। এইভাবে হিসাব করলে ‘উদয়দিগন্তে ঐ শুভ্র শঙ্খ বাজে’ এই লাইনটাতে চোদ্দ মাত্রা পাওয়া যাবে, অক্ষরগণনা নিষ্প্রয়োজন—এ কথা বলাই ‘ছন্দোবিৎ’এর অভিপ্রায়। বস্তুত এই লাইনটা নিয়ে কারও কোনো খটকা (পৃ ৫৪) লাগেনি।[] ছন্দোবিশ্লেষণপ্রণালীর পার্থক্যবশতই কবির এই সংশয় দেখা দিয়েছিল।

  1. “আমি অবশ্য এ লাইনটিকে কান পেতেও পড়েছি, নিয়ম পেতেও পড়েছি। ... কান পেতে ও-লাইনটিতে কিছুমাত্র ত্রুটি পাইনি এবং নিয়ম পেতেও আমার কিছুমাত্র খটকা লাগেনি।... বরং অক্ষরবৃত্ত ছন্দের একটি নিখুঁত ও সুন্দর নিদর্শন হিসেবেই আমি অগ্রহায়ণের প্রবন্ধে এই লাইনটি গ্রহণ করেছি।”
    —বিচিত্রা, ১৩৩৮ মাঘ: ছন্দ-জিজ্ঞাসা, ১ম পর্ব: পৃ ১১১