পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৬
ছন্দ

 ‘বাংলায় হসন্ত শব্দের পূর্ববর্তী স্বর দীর্ঘ হয়,’ এই নিয়মটি সার্বত্রিকও নয়। ‘উদয়দিগন্তে ঐ’ ইত্যাদি লাইনটিতে দয়্ এবং ঐ, এই দুই স্থলে নিয়মটি প্রযোজ্য, কিন্তু গন্, শুভ্ ও শঙ্ এই তিন স্থলে এটি প্রযোজ্য নয়। ‘একটি কথা এতবার হয় কলুষিত’ এই লাইনটিতে (পৃ ৬০) ‘বার্’ এবং ‘হয়্’ এই দুই স্থলে ওই নিয়ম খাটে, কিন্তু ‘একটি’ শব্দে খাটে না। ‘চিমনি ভেঙে গেছে দেখে’ ইত্যাদি দৃষ্টান্তটিতে চিম্‌নি শব্দের প্রয়োগপ্রণালীও এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় (পৃ ২৭৬)। ‘মন্‌ বেচারির কি দোষ্ আছে’ (পৃ ১৭০), ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা’ (পৃ ১৪৩), এইজাতীয় দলমাত্রিক রীতির ছন্দেও সাধারণত ‘প্রাক্‌হসন্ত স্বরকে দুই মাত্রার পদবি’ দেওয়া হয় না।

 লয়—গানে সুর প্রবাহের কালব্যাপ্তিগত গতিসমতার নাম লয় (tempo)। সুরপ্রবাহের গতিবেগের তীব্রতাভেদে লয়কে দ্রুত মধ্য বিলম্বিত প্রভৃতি বিশেষণে নির্দিষ্ট করা হয়। দ্রুত লয়কেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ‘দুরন্ত’ (পৃ ৩৯)।

 গীতগতির সমতা অর্থাৎ লয় রক্ষার যে ব্যবস্থা, তারই নাম তাল। ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হলেও লয় ও তাল অভিন্ন নয়; তাল লয়ের সহায়ক ও সংরক্ষক। এই গ্রন্থে লয় ও তাল শব্দদুটি সর্বতোভাবে গীতশাস্ত্রানুমোদিত পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি।

 এই গ্রন্থের কোনো কোনো উক্তিতে মনে হয় লয় ও তাল একই বস্তু। যেমন, এক জায়গায় আছে, ‘কাব্যে ছন্দের যে কাজ, গানে তালের সেই কাজ’ (পৃ ২১); অন্যত্র আছে, ‘কবিতায় যেটা ছন্দ, সংগীতে সেইটেই লয়’ (পৃ ২৩)। এই দুই উক্তি থেকে তাল ও লয়ের অভিন্নতাবোধই জন্মে। ‘চৌপদীতে কাওয়ালির লয়ে ঝোঁক দিতে হয়’ (পৃ ১২), এই মন্তব্যও উক্ত অনুমানেরই সমর্থক। প্রাকৃত-বাংল। ছন্দকে এক স্থানে বলা হয়েছে ‘তিনমাত্রা লয়ের ছন্দ’