পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৮
ছন্দ

‘তরঙ্গিত ভঙ্গিটাই বিশেষ আখ্যা পেয়ে থাকে’ (পৃ ৮৩), কিংবা ‘ভঙ্গি নিয়েই ছন্দ’ (পৃ ৮৫)। আর, সঙ্গে সঙ্গে ভঙ্গির পার্থক্যেই লয়ের বিচার করা হয়েছে। এই যে ঢেউখেলানো বা তরঙ্গিত ভঙ্গি, তাকে কখনও বলা হয়েছে গতিভঙ্গি (পৃ ৮৩), কখনও বলা হয়েছে চলনের ভঙ্গি (পৃ ৮৭)। চলন কথার প্রতিশব্দ পদক্ষেপ (পৃ ৩৪)। চলন ও পদক্ষেপ, দুএরই মানে কখনও পর্ব, কখনও উপপর্ব। চলন বা পদক্ষেপের আয়তনভেদে তথা বিভিন্ন আয়তনের সমাবেশভেদে ছন্দে লয়ের অর্থাৎ রিদ্‌ম্‌এর পার্থক্য ঘটে (পৃ ৪২)। এইজন্যই চলন বা পদক্ষেপের ভঙ্গিকে বলা হয়েছে ‘পা-ফেলার লয়’ (পৃ ৬২)।

 চলন বা পদক্ষেপের আয়তন- ও সমাবেশ-গত বৈচিত্র্যের ফলে রিদ্‌ম্ বা লয়ের যে বৈচিত্র্য ঘটে, তার বহু দৃষ্টান্ত আছে ৪২-৪৩ এবং ৮৮-৯১ পৃষ্ঠায়। ‘বিষম মাত্রার লয়’ (পৃ ১৯) কথার দ্বারাও বোঝা যায় পদক্ষেপ- বা চলন-ভঙ্গিরই নামান্তর লয়। এই চলনভঙ্গি বা রিদ্‌ম্ অর্থে লয় শব্দের ন্যায় ‘ছন্দ’ কথাটিরও বহুল প্রয়োগ দেখা যায় এই গ্রন্থে। এটাই স্বাভাবিক, রিদ্‌ম্‌ই ছন্দের প্রাণ। তাই, দুইমাত্রার ছন্দ (পৃ ৩৮) এবং দুইমাত্রার লয় (পৃ ৬৮) মানে একই। তেমনি তিনমাত্রার ছন্দ (পৃ ৬২) ও তিনমাত্রা লয়ের ছন্দ (পৃ ৬৪) অভিন্নার্থক। তাল কথাটিও অনেক স্থলেই ছন্দের স্পন্দনভঙ্গি অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে। যাকে বলা হয়েছে তিনমাত্রার ছন্দ বা তিনমাত্রা লয়ের ছন্দ (পৃ ৬২-৬৩) তাকেই অন্যত্র বলা হয়েছে তিনমাত্রার তাল (পৃ ২১৭)। বস্তুত এই সাধারণ অর্থে তাল ও লয় অভিন্ন। কিন্তু তাল শব্দটি যেখানে সংগীতশাস্ত্রের পারিভাষিক অর্থে গৃহীত হয়েছে, সেখানেই তালের সঙ্গে লয়ের ‘বিবাদ’ (পৃ ২৩, ২৬) সম্ভবপর। তালের একএকটি বিভাগই তার চলনভঙ্গির বা লয়ের পরিচায়ক। চিরাগত পারিভাষিক তালের কতকগুলি বাঁধা চলনভঙ্গি আছে। অথচ কাব্য বা গানের ছন্দে