নূতন নূতন চলনভঙ্গি বা লয় উদ্ভাবন করা সম্ভবপর। পুরাতন পারিভাষিক তাল এইসব লয়কে মানে না। তাই তালে ও লয়ে বিবাদ ঘটে এবং লয়ের হিসাব পাওয়া গেলেও সাবেক আমলের তালের হিসাব পাওয়া যায় না (পৃ ২৬)।
শাখা (পৃ ১৩২)—সমস্ত ছন্দেরই প্রাণবস্তু এক, ধ্বনির স্পন্দন অর্থাৎ রিদ্ম্। কিন্তু তার প্রকাশ বিভিন্ন, তার লীলা বিচিত্র। ধ্বনিস্পন্দনের এই লীলাবৈচিত্র্যই আমাদের কাছে ছন্দোবৈচিত্র্যরূপে প্রতিভাত হয়। ছন্দশাস্ত্রের কাজ এই বৈচিত্র্যের অন্তর্নিহিত মৌলিক নীতিগুলি আবিষ্কার করা এবং সেগুলির উপরে নির্ভর করে সমস্ত ছন্দকে সুশৃঙ্খলভাবে বিভিন্ন শ্রেণীতে সজ্জিত করা। এই শ্রেণীকেই বলা হয়েছে শাখা।
ছন্দের শ্রেণীবিভাগ করা যায় নানাভাবে, অর্থাৎ নানা প্রণালী অবলম্বন করে। রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আদর্শে বাংলা ছন্দের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। প্রথমত তিনি উপপর্বের মাত্রা পরিমাণ অনুসারে সমস্ত ছন্দকে সমমাত্রার, অসমমাত্রার ও বিষমমাত্রার, এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন (পৃ ৩৬)। এ-রকম বিভাগে উপপর্ব রচনার মূলনীতিগুলি অর্থাৎ উপপর্বে মাত্রাসমাবেশের প্রণালীগুলিই অলক্ষিত থেকে যায়। এই বিভাগ উপপর্বের আকৃতিগত; প্রকৃতিগত নয়। ফলে বিভিন্ন প্রকৃতির ছন্দ এক শ্রেণীর অন্তর্গত বলে গণ্য হয়। যেমন—‘নিম্নে যমুনা বহে স্বচ্ছশীতল’ এবং ‘উন্মত্ত যমুনা বহে, আবর্তিত জল’, এই দুটি দৃষ্টান্তই (পৃ ১২৩) সমমাত্রার ছন্দ, যদিও এ দুটির প্রকৃতিগত পার্থক্য প্রচুর। দ্বিতীয়ত রবীন্দ্রনাথ ভাষারীতি অনুসারে সমস্ত ছন্দকে সাধু- বা সংস্কৃত-বাংলার ছন্দ (সাধুছন্দ, পয়ারজাতীয় ছন্দ) এবং চলতি- বা প্রাকৃত-বাংলার ছন্দ (ছড়ার ছন্দ, লৌকিক ছন্দ), এই দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। ছন্দের উপরে ভাষারীতির প্রভাব আছে সন্দেহ নেই; কিন্তু ভাষারীতির