পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
৩০১

 পর্ব বা উপপর্বের মাত্রাস্থাপনরীতি অনুসারে ছন্দের শ্রেণীবিভাগ করলে এইজাতীয় ত্রুটি ঘটে না। এই মাত্রাস্থাপনরীতিকেই বলা যায় ছন্দোরীতি। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ছন্দের তিনটি রীতিকেই বলেছেন তিনটি শাখা (পৃ ১৩২)। এই তিন রীতির কথা ‘মাত্রা’ সংজ্ঞার পরিচয় প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে। যথা—সিলেব্‌ল্‌মাত্রিক বা দলমাত্রিক রীতি (পৃ ২৭২), সাধারণ কলামাত্রিক বা মাত্রাবৃত্ত রীতি (পৃ.২৭৬, ২৭৮) এবং বিশিষ্ট কলামাত্রিক (প্রচলিত পরিভাষায় অক্ষরবৃত্ত, অক্ষর মাত্রিক বা অক্ষরগোনা) রীতি (পৃ ২৭৬-৭৭)। দৃষ্টান্ত দিলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে। ‘সতত হে নদ তুমি’ ইত্যাদি লাইন-দুটি সুপরিচিত ‘অক্ষরগোনা’ পয়ার (পৃ ১৪২)। অক্ষরগোনা পয়ার মানে অক্ষরমাত্রার (অর্থাৎ বিশিষ্ট কলামাত্রার, পৃ ২৭৩-৭৬) পয়ার। ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা’ ইত্যাদি লাইন-দুটিও পয়ার; কিন্তু সিলেব্‌ল্‌মাত্রার পয়ার, অক্ষরমাত্রার নয় (পৃ ১৪৩)। ‘নিম্নে যমুনা বহে’ ইত্যাদি লাইন-দুটিও পয়ার (পৃ ১৮১); কিন্তু সাধারণ কলামাত্রার পয়ার, অক্ষরমাত্রারও (অর্থাৎ বিশিষ্ট কলামাত্রারও) নয়, দলমাত্রারও নয়। অর্থাৎ মাত্রাস্থাপনের ত্রিবিধ রীতিভেদে পয়ার ত্রিবিধ—সাধারণ কলামাত্রিক (মাত্রাবৃত্ত), বিশিষ্ট কলামাত্রিক (অক্ষরগোনা) এবং দলমাত্রিক (সিলেব্‌ল্‌গোনা)। পয়ারের ন্যায় ত্রিপদী চৌপদীও ত্রিবিধ।

 পয়ার ত্রিপদী প্রভৃতি ছন্দোবন্ধের তিন রীতির অর্থাৎ বাংলা ছন্দের তিন শাখার নামকরণে প্রচুর মতভেদ দেখা যায়। ছন্দোবদ্ধ কবিতার ভাষার প্রতি লক্ষ্য রেখে রবীন্দ্রনাথ সিলেব্‌ল্- বা দল-মাত্রার ছন্দকে বলেছেন ‘প্রাকৃত-বাংলার ছন্দ’। এরই নামান্তর ছড়ার ছন্দ বা লৌকিক ছন্দ। অক্ষরমাত্রার অর্থাৎ বিশিষ্ট কলামাত্রার ছন্দকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘সাধুছন্দ’ বা ‘সংস্কৃত-বাংলার ছন্দ’। এরই নামান্তর অক্ষরবৃত্ত।