পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
৩০৫

মতোই অনেক স্থলে তের অক্ষরের পরে একটি অতিরিক্ত যতি স্বীকার করেছেন, মিল দিয়ে সে যতিকে পরিস্ফুট করেছেন এবং ভারতচন্দ্রের মতো দ্বিবিধ মিলেরই প্রয়োগ করেছেন, যদিও ‘দয়ালো ভূপাল’-জাতীয় মিলের প্রতি তাঁর পক্ষপাত বেশি। তা ছাড়া, দ্বিজেন্দ্রনাথ এক স্থলে ভারতচন্দ্রের মতোই ‘হরি হরি’ কথাটিও ব্যবহার করেছেন। দৃষ্টান্ত দিলেই এ-সব কথার সমর্থন পাওয়া যাবে। যথা—

পিতা মাতা ভ্রাতা | নবশিশু অনাথা | লুট ক’রে,
বিরাজে জাহাজে | মসিমলিন কোর্তা | বুট প’রে।...
সুখ স্বপ্নে আপ্নে | বড় চতুর মানে | হরি হরি-।

এই লাইনগুলির সঙ্গে নাগাষ্টকংএর উদ্ধৃত লাইনগুলির তুলনা করলেই উভয় রচনার সাদৃশ্য নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হবে। শংকরাচার্যের ‘সৌন্দর্যলহরী’ কাব্যও (পৃ ১৫০) শিখরিণী ছন্দে রচিত। একটু মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, এ ছন্দ ভারতচন্দ্র ও দ্বিজেন্দ্রনাথ কারও আদর্শ নয়।

 স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্যের (১৮৭৫) ‘লজ্জা বলিল’ ইত্যাদি সংস্কৃত-ভাঙা মাত্রাসর্বস্ব শিখরিণী ছন্দের রচনাটিতেও[১] (পৃ ১৩৩) দ্বিজেন্দ্রনাথ মাত্রাবিভাজনের ব্যাপারে ভারতচন্দ্রেরই অনুসরণ করেছেন। ভারতচন্দ্র ‘ভবদ্দেশে শেষে’ ইত্যাদি অংশে মাত্রাবিভাজন করেছেন এইভাবে।—

সাত+চার | পাঁচ + চার | পাঁচ।

‘লজ্জা বলিল’ ইত্যাদি অংশে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠিক এইভাবেই মাত্রাবিভাজন করেছেন। এত খুঁটিনাটি সাদৃশ্য আকস্মিক নয় বলেই মনে হয়। এই প্রসঙ্গে দেশে-শেষে-বিশেষে এই মিলটার সঙ্গে হবে-তবে-রবে মিলের সাদৃশ্যটাও স্মরণীয়।

  1. স্বপ্নপ্রয়াণ, প্রথম সং (১৮৭৫), দ্বিতীয় সর্গ, ১২৫; তৃতীয় সং (১৯১৪), দ্বিতীয় সর্গ, ১১৫।