মতোই অনেক স্থলে তের অক্ষরের পরে একটি অতিরিক্ত যতি স্বীকার করেছেন, মিল দিয়ে সে যতিকে পরিস্ফুট করেছেন এবং ভারতচন্দ্রের মতো দ্বিবিধ মিলেরই প্রয়োগ করেছেন, যদিও ‘দয়ালো ভূপাল’-জাতীয় মিলের প্রতি তাঁর পক্ষপাত বেশি। তা ছাড়া, দ্বিজেন্দ্রনাথ এক স্থলে ভারতচন্দ্রের মতোই ‘হরি হরি’ কথাটিও ব্যবহার করেছেন। দৃষ্টান্ত দিলেই এ-সব কথার সমর্থন পাওয়া যাবে। যথা—
পিতা মাতা ভ্রাতা | নবশিশু অনাথা | লুট ক’রে,
বিরাজে জাহাজে | মসিমলিন কোর্তা | বুট প’রে।...
সুখ স্বপ্নে আপ্নে | বড় চতুর মানে | হরি হরি-।
এই লাইনগুলির সঙ্গে নাগাষ্টকংএর উদ্ধৃত লাইনগুলির তুলনা করলেই উভয় রচনার সাদৃশ্য নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হবে। শংকরাচার্যের ‘সৌন্দর্যলহরী’ কাব্যও (পৃ ১৫০) শিখরিণী ছন্দে রচিত। একটু মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, এ ছন্দ ভারতচন্দ্র ও দ্বিজেন্দ্রনাথ কারও আদর্শ নয়।
স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্যের (১৮৭৫) ‘লজ্জা বলিল’ ইত্যাদি সংস্কৃত-ভাঙা মাত্রাসর্বস্ব শিখরিণী ছন্দের রচনাটিতেও[১] (পৃ ১৩৩) দ্বিজেন্দ্রনাথ মাত্রাবিভাজনের ব্যাপারে ভারতচন্দ্রেরই অনুসরণ করেছেন। ভারতচন্দ্র ‘ভবদ্দেশে শেষে’ ইত্যাদি অংশে মাত্রাবিভাজন করেছেন এইভাবে।—
সাত+চার | পাঁচ + চার | পাঁচ।
‘লজ্জা বলিল’ ইত্যাদি অংশে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠিক এইভাবেই মাত্রাবিভাজন করেছেন। এত খুঁটিনাটি সাদৃশ্য আকস্মিক নয় বলেই মনে হয়। এই প্রসঙ্গে দেশে-শেষে-বিশেষে এই মিলটার সঙ্গে হবে-তবে-রবে মিলের সাদৃশ্যটাও স্মরণীয়।
- ↑ স্বপ্নপ্রয়াণ, প্রথম সং (১৮৭৫), দ্বিতীয় সর্গ, ১২৫; তৃতীয় সং (১৯১৪), দ্বিতীয় সর্গ, ১১৫।