পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৪১
ছন্দ
৪১

ছন্দের অর্থ ৪১

যাই হোক আমার 'বক্তব্য এই, ছন্দের পরিচয়ের মূলে ছুটি প্রশ্ন

আছে । এক হচ্ছে তার প্রতোক পদক্ষেপে ক'টি করে মাত্রা আছে। ছুই হচ্ছে, সে মাত্রা সম, অসম, না বিষম অথবা সম-বিষমের ফোগ। আমরা যখন মোটা করে বলে থাকি যে, এটা চোদ্দ মাত্রার ছন্দ, বা ওট1 দশ মাত্রার তখন আদল কথাটাই বলা হয় না। তার কারণ পূর্বেই বলেছি চাল অর্থাৎ, প্রদক্ষিণের মাত্রায় ছন্দকে চেনা যায় না, চলন অর্থাৎ পদক্ষেপের মাত্রায় তার পরিচয় | চোদ্দ মাত্রায় শুধু যে পয়ার হয়না, আরো অনেক ছন্দ হয় তার দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক।

বসন্ত পাঠায় দূত রহিয়1 রহিয়া,

যে কাল গিয়েছে তারি নিশ্বাস বহিয়া। এই তো পয়ার, এর প্রত্যেক প্রদক্ষিণে ছুটি পদক্ষেপ। প্রথম পদক্ষেপে আটটি উচ্চারিত মাত্রা, স্থিতীয় পদক্ষেপে ছয়টি উচ্চারিত মাত্রা এবং ছুটি অন্ুচ্চারিত অর্থাৎ যতির মাত্র/। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রদক্ষিণে মোটের উপর উচ্চারিত যাত্রা চোদদ। আমরা পয়ারের পরিচয় দেওয়ার কালে প্রত্যেক প্রদক্ষিণের উচ্চারিত মাত্রার সমষ্টির [হসাব দিয়ে থাকি। তার প্রধান কারণ, কিছুকাল পূর্বে পয়ার ছাড়া চোদ্দ মাত্রাসমষ্টির ছন্দ আমাদের ব্যবহারে লাগত না। নিম্নলিখিত চোদ মাত্রার ছন্দেও ঠিক পয়ারের মতোই প্রতোক প্রদক্ষিণে দুটি করে পদক্ষেপ।'

ফাগুন এল দ্বারে কেহ যে ঘরে নাই,

পরান ডাকে কারে ভাবিয়া নাহি পাই। অথচ এটা - মোটেই পয়ার নয়। তফাত হল কিসে যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, এর প্রতিপদক্ষেপে আটের বদলে সাত উচ্চারিত মাত্রা। আর অন্ুচ্চারিত মাত্রা প্রতিপদক্ষেপের শেষে একটি করে দেওয়া যেতে পারে । যেমন--

ফাগুন এল দ্বারে-এ কেহ যে ঘরে না-আ-ই।