পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দের হসন্ত হলন্ত
৭৫

নয়। বাংলা-প্রাকৃতের অনিবার্য নিয়মে এই পদের যে শব্দগুলি হসন্ত, তারা আপনারই স্বরধ্বনিকে প্রসারিত করে ফাঁক ভরতি করে নিয়েছে। ‘রূপ’ এবং ‘ডুব’ আপন উকারধ্বনিকে টেনে বাড়িয়ে দিলে। ‘সাগরের’ শব্দ আপন একারকে পরবর্তী হসন্ত র-এর পঙ্গুতা চাপা দিতে লাগিয়েছে। এই উপায়ে ঐ পদটার প্রত্যেক শব্দ নিজের মধ্যেই নিজের মর্যাদা বাঁচিয়ে চলেছে। অর্থাৎ এ-ছন্দে ডিমক্রেসির প্রভাব নেই। এই রকমের ছন্দে দুই মাত্রার ধ্বনি আপন পদক্ষেপের প্রত্যেক পর্যায়ে যে অবকাশ পায় তা নিয়ে তার গৌরব। বস্তুত এই অবকাশের সুযোগ গ্রহণ করে তার ধ্বনিসমারোহ বাড়িয়ে তুললে এ ছন্দের সার্থকতা। যথা—

চৈতন্য নিমগ্ন হল রূপসিন্ধুতলে।

প্রাকৃত-বাংলা দেখা যাক।

রূপসাগরে ডুব দিয়েছি অরূপ রতন আশা করি

‘এখানে ‘রূপ’ আপন হসন্ত প-এর ঝোঁকে ‘সাগরে’র সা-টাকে টেনে আপন করে নিয়েছে, মাঝে ব্যবধান থাকতে দেয়নি। 'রূপ-সা' তাই আপনিই তিনমাত্রা হয়ে গেল। ‘সাগরে’র বাকি টুকরো রইল ‘গরে’। সে আপন ওজন বাঁচাবার জন্যে রে-টাকে দিলে লম্বা করে, তিনমাত্রা পুরল। ‘ডুব’ আপনার হসন্তর টানে ‘দিয়েছি’র দি-টাকে করলে আত্মসাৎ। এমনি করে আগাগোড়া তিনমাত্রা জমে উঠল। হসন্তপ্রধান ভাষা সহজেই তিনমাত্রার দানা পাকায়, এটা দেখেছি। এমন কি, যেখানে হসন্তের ভিড় নেই সেখানেও তার ঐ একই চাল। এটা যেন তার অভ্যস্ত হয়ে মজ্জাগত হয়ে গেছে। যেমন—

অচে- | তনে-| ছিলেম | ভালো-।
আমায় | চেতন। করলি | কেনে-।