পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বড়ো একটা প্রকাও চপেটাঘাত নিয়ে আমাদের উপর ছুটে আসবেন। ধুলোয় এমনি অন্ধকার হয়ে এল যে পাঁচ হাত দূরে কিছু দেখা যায় না। বাতাসের বেগ ক্রমেই বাড়তে লাগল; কাকরগুলো বায়ুতাড়িত হয়ে ছিটেগুলির মতো আমাদের বিধতে লাগল ; মনে হল বাতাস পিছন থেকে ঘাড় ধরে আমাদের ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে ; ফোটা ফোট৷ বৃষ্টিও পিটু পিট্‌ ক’রে মুখের উপর সবেগে আঘাত করতে লাগল। দৌড় দৌড়, মাঠ সমান নয়। এক-এক জায়গায় আবার খোয়াইয়ের ভিতর নাবতে হয়, সেখানে সহজ অবস্থাতেই চলা শক্ত, এই ঝড়ের বেগে চলা আরও মুশকিল। পথের মধ্যে আবার পায়ে কাটামৃদ্ধ একটা শুকনো ডাল বিধে গেল ; সেটা ছাড়াতে গিয়ে, বাতাস আবার পিছন থেকে ঠেলা দিয়ে মুখ থুবড়ে ফেলবার চেষ্টা করে। বাড়ির যখন প্রায় কাছাকাছি এসেছি তখন দেখি,তিন-চারটে চাকর মহা সোরগোল ক’রে দ্বিতীয় আর-একটা ঝড়ের মতো আমাদের উপরে এসে পড়ল। কেউ হাত ধরে, কেউ আহা-উহু বলে, কেউ পথ দেখাতে চায়, কেউ আবার মনে করে বাবু বাতাসে উড়ে যাবেন, ব’লে পিঠের দিক থেকে জড়িয়ে ধরে। এই সমস্ত অনুচরদের দৌরাত্ম্য কাটিয়ে-কুটিয়ে, এলোমেলো চুলে, ধূলিমলিন দেহে, সিক্ত বস্ত্রে, হঁাপিয়ে বাড়িতে এসে তো পড়লুম। যা হোক, একটা খুব শিক্ষালাভ করেছি। হয়তো কোনদিন কোন কাব্যে কিম্বা উপন্যাসে বর্ণনা করতে বসতুম,একজন নায়ক মাঠের মধ্যে দিয়ে ভীষণ ঝড়বৃষ্টি ভেঙে নায়িকার মধুর মুখচ্ছবি স্মরণ ক’রে অকাতরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু, এখন আর এরকম মিথ্যা কথা লিখতে পারব না ; ঝড়ের সময় কারও মধুর মুখ মনে রাখা অসম্ভব— কী করলে চোখে কাকর ঢুকবে না সেই চিন্তাই সর্বাপেক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে। আমার আবার চোখে eye-glas৪ ছিল ; সেটা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে ফেলে, N ) R