পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিছুতেই রাখতে পারি নে। এক হাতে চষমা ধ’রে আর এক হাতে ধুতির কোচ সামলে, পথের কাটাগাছ এবং গর্ত বঁচিয়ে চলছি। যদি এখানকার কোপাই নদীর ধারে আমার কোনো প্রণয়িনীর বাড়ি থাকত, আমার চষমা এবং কোচ সামলাতুম না তার স্মৃতি সামলাতুম। বাড়িতে ফিরে এসে কাল অনেক ক্ষণ ভাবলুম—বৈষ্ণব কবির গভীর রাত্রে ঝড়ের সময় রাধিকার অকাতর অভিসার সম্বন্ধে অনেক ভালো ভালো মিষ্টি কবিতা লিখেছেন ; কিন্তু একটা কথা ভাবেন নি, এরকম ঝড়ে কৃষ্ণের কাছে তিনি কী মূর্তি নিয়ে উপস্থিত হতেন। চুলগুলোর অবস্থা যে কিরকম হত সে তো বেশ বোঝা যাচ্ছে । বেশবিন্যাসেরই বা কিরকম দশা। ধুলোতে লিপ্ত হয়ে, তার উপর বৃষ্টির জলে কাদা জমিয়ে, কুঞ্জবনে কিরকম অপরূপ মূর্তি ক’রে গিয়েই দাড়াতেন ! এসব কথা কিন্তু বৈষ্ণব কবিদের লেখা পড়বার সময় মনে হয় না। কেবল মানসচক্ষে ছবির মতো দেখতে পাওয়া যায় একজন সুন্দরী শ্রাবণের অন্ধকার রাত্রে বিকশিত কদম্ববনের ছায়া দিয়ে, যমুনার তীরপথে, প্রেমের আকর্ষণে, ঝড়বৃষ্টির মাঝে আত্মবিহবল হয়ে স্বপ্নগতার মতো চলেছেন। পাছে শোনা যায় বলে পায়ের নূপুর বেঁধে রেখেছেন, পাছে দেখা যায় ব’লে নীলাম্বরী কাপড় পরেছেন ; কিন্তু পাছে ভিজে যান ব’লে ছাতা নেন নি, পাছে পড়ে যান ব’লে বাতি আনা আবশ্যক বোধ করেন নি। হায়, আবশ্যক জিনিসগুলো আবশ্বকের সময় এত বেশি দরকার, অথচ কবিত্বের বেলায় এত উপেক্ষিত ! আবশ্বকের শতলক্ষ দাসত্ববন্ধন থেকে আমাদের মুক্তি দেবার জন্তে কবিতা মিথ্যে ভান করছে। ছাতা জুতো জামাজোড়া চিরকাল থাকবে । বরঞ্চ শোন৷ যায় সভ্যতার উন্নতি-সহকারে কাব্য ক্রমে লোপ পাবে, কিন্তু ছাতাজুতোর নতুন নতুন পেটেণ্ট বেরোতে থাকবে।

  • S \\0