পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোলপুর ৩১ মে ১৮৯২ এখনও পাচটা বাজে নি, কিন্তু আলো হয়েছে, বেশ বাতাস দিচ্ছে, এবং বাগানের সমস্ত পাখিগুলো জেগে উঠে গান জুড়ে দিয়েছে। কোকিলটা তো সারা হয়ে গেল। সে কেন যে এত অবিশ্রাম ডাকে এ পর্যন্ত বোঝা গেল না— অবশ্য, আমাদের শ্রুতিবিনোদনের জন্যে নয়, বিরহিণীকে পীড়ন করবার অভিপ্রায়েও নয়, তার নিজের একটা পার্সোনাল উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু হতভাগার সে উদ্দেশ্য কি কিছুতেই সিদ্ধ হচ্ছে না। ছাড়েও না তো— কুউ কুউ চলছেই। আবার এক-একবার যেন দ্বিগুণ অস্থির হয়ে দ্রুত বেগে কুহুধ্বনি করছে। এর মানে কী। আবার আর-খানিকট দূরে আর-একটা কী পাখি নিতান্ত মৃত্যু স্বরে কুক্‌ কুক্‌ করছে— তাতে কিছুমাত্র উৎসাহ-আগ্রহের বীজ নেই ; লোকটা যেন নেহাত মন-মরা হয়ে গেছে, সমস্ত আশা ভরসা ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু তবু ছায়ায় বসে সমস্ত দিন ওই একটুখানি কুক্‌ কুক্‌ কুক্‌ কুক্‌, ওটুকু ছাড়তে পারছে না। বাস্তবিক, ঐ ডানাওয়ালা ছোটো ছোটো নিরীহ জীবগুলি, অতি কোমল গ্রীবাটুকু বুকটুকু এবং পাঁচমিশালি রঙ নিয়ে গাছের ছায়ায় বসে আপন আপন ঘরকন্না করছে— ওদের আসল বৃত্তান্ত কিছুই জানি নে। বাস্তবিক, বুঝতে পারি নে ওদের এত ডাকবার কী আবশ্যক । > > \>