পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৭ এপ্রেল ১৮৮৬

 সাব-ডেপুটি সা’ব,

 ৺গয়াধামে আপনি গমন করেছেন, এখন আমার কী গতি করে গেলেন? আপনার দর্শন আমার নিয়মিত বরাদ্দের মতো হয়ে গিয়েছিল, এখন তার থেকে বঞ্চিত হয়ে আমি মৌতাতহীন অহিফেনসেবীর মতো ছট্‌ফট্‌ করছি। বাস্তবিক আপনি আমাকে অহিফেনই ধরিয়েছেন বটে। আপনি এসে নানা কৌশলে আমাকে গোটাকতক ছোটো ছোটো কল্পনার গুলি গেলাতেন, আমার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলতেন, আমাকে আমারই প্রভাতসংগীত-সন্ধ্যাসংগীতের মধ্যে আচ্ছন্ন ক’রে ফেলতেন, আমি চোখ বুজে আনন্দে আমার নিজের মধ্যে প্রবেশ ক’রে বসে থাকতুম এবং সেইখান থেকে নেশার ঝোঁকে স্বগত উক্তি প্রয়োগ করতুম, আপনি শুনে মনে মনে হাসতেন। আফিমের নেশা একেই বলে। আত্মম্ভরিতার মধ্যে আচ্ছন্ন হয়ে নিজের স্বপ্নে ভোর হওয়াকেই বলে আফিমের নেশা। আপনি সেই নেশাটাই আমাকে অভ্যেস করিয়েছেন। আপনি প্রায় আপনার নিজের কথা বলতেন না, উল্‌টে পাল্‌টে আমারই কবিতা, আমারই লেখা, আমারই কথার মধ্যে আমাকে টেনে নিয়ে ফেলতেন—আমাকে খুব মাতিয়ে রেখেছিলেন যাহোক! ইংরেজেরা বর্মায় চীনে আফিম ঢুকিয়েছে, আপনি আমার সেই অয়েল্‌ক্লথ-মণ্ডিত ক্ষুদ্র ঘরটির মধ্যে গোপনে অলক্ষ্যে আফিমের ব্যাবসা প্রবেশ করিয়েছেন—আপনি সহজ লোকটি নন। কিন্তু একবার আফিম ধরিয়ে আপনি কৌটা-সমেত কোথায় অন্তর্ধান হলেন? আমি মৌতাত-বিরহে এই দুরন্ত গ্রীষ্মে একলা ঘরে ব’সে দু বেলা হাই তুলছি এবং গা-মোড়া দিচ্ছি। নিদেন, আমার দ্বারের পার্শ্বে আপনার সেই পরিচিত ছাতিটা জুতোটা রেখে গেলেও আমার

১০