পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৫৪

শিলাইদহ

শুক্রবার। ৪ আষাঢ় ১৮৯২

 আজকাল আমি বিকেলে সন্ধ্যার দিকে ডাঙায় উঠে অনেক ক্ষণ বেড়াতে থাকি। পূর্বদিকে যখন ফিরি একরকম দৃশ্য দেখতে পাই, পশ্চিমে যখন ফিরি আর-একরকম দেখতে পাই—আকাশ থেকে আমার মাথার উপরে যেন সান্ত্বনা বৃষ্টি হতে থাকে, আমার তুই মুগ্ধ চোখের ভিতর দিয়ে যেন একটি স্বর্ণময় মঙ্গলের ধারা আমার অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করতে থাকে। এই বাতাসে আকাশে এবং আলোকে প্রতি ক্ষণে আমার মন ছেয়ে যেন নতুন পাতা গজিয়ে উঠছে; আমি নতুন প্রাণ এবং বলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছি। সংসারের সমস্ত কাজ করা এবং লোকের সঙ্গে ব্যবহার করা আমার পক্ষে ভারি সহজ হয়ে পড়েছে। আসলে সবই সোজা, একটিমাত্র সিধে রাস্তা আছে। চোখ চেয়ে সেই রাস্তা ধরে গেলেই হল, নানারকম বুদ্ধিপূর্বক short out খোঁজবার দরকার দেখি নে; সুখ দুঃখ সকল রাস্তাতেই আছে, কোনো রাস্তা দিয়েই তাদের এড়িয়ে যাবার জো নেই, কিন্তু শান্তি কেবল এই বড়ো রাস্তাতেই আছে।

১২৪