পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কথঞ্চিৎ সান্ত্বনা ছিল। আপনার পত্রপাঠে অবগত হলেম আপনি স্ত্রীগয়াধামে আপনার প্রেতপুরীতে মনুষ্যাভাবে নিতান্ত কাতর আছেন, কিন্তু আপনার কাজ আপনার সঙ্গী, অর্থাৎ আপনি আছেন এবং আপনার চিরসঙ্গী ‘সাব-ডেপুটি’ আপনার ছায়ার মতো সঙ্গে আছেন। সে সঙ্গীকে এখনো আপনার তেমন ভালো লাগছে না, কিন্তু ক্রমে তার প্রতি প্রীতি জম্মানো কিছু অসম্ভব নয়।

 আমি-ব্যক্তির হাতে এখন কোনো কাজকর্ম নেই—চাপকানের বোতামগুলো খুলে দেহ এলিয়ে এখন গায়ে বাতাস লাগাচ্ছি, সৌভাগ্যক্রমে এখন অহিফেনের ততটা দরকার বোধ হচ্ছে না। আমার তাকিয়ার মধ্যে স্বপ্ন পোষা রয়েছে—সেটা একটা স্বপ্নের বৃহৎ ডিবের মতো বোধ হচ্ছে, তার উপরে মাথা রাখলেই মাথার মধ্যে হুহু ক’রে নেশা প্রবেশ করে। এতদিন মাথার উপরে ‘বালক’ কাগজের বোঝাটা থাকাতেই মাথা যেন রুদ্ধ হয়ে ছিল, নেশা একেবারে ছুটে গিয়েছিল—এখন সমস্ত খোলাসা—দক্ষিনে বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা যেন চার দিকে উড়ে বেড়াচ্ছে।

 এ সময়ে আমাকে যদি একটা বাগান দিতে পারতেন। নদীর তীর, গাছের ছায়া, মাঠের বাতাস, আমের বোল, কোকিলের কুহু, বসন্তী রঙের চাদর, বকুল ফুলের মালা, এবং সেই সঙ্গে আপনাকেও চাচ্ছি। কলকাতা শহর, পোলিটিকেল এজিটেশন, বসন্তকালে এ তো সহ্য হয় না। কোথায় আপনার বাগান শ্রীশবাবু, কোথায় আপনি? সংস্কৃত কবি বলেছেন—

সংগমবিরহবিকল্পে বরমপি বিরহো ন সংগমস্তস্যাঃ।
সঙ্গে সৈব তথৈকা ত্রিভুবনমপি তন্ময়ং বিরহে॥

ভাবার্থ: সংগম এবং বিরহের মধ্যে বরং বিরহ ভালো, তবু সংগম কিছু না—কারণ, মিলনের অবস্থায় সে একা আমার কাছে থাকে

১১