পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢ዓ শিলাইদা সোমবার। ২২ জুন ১৮৯২ আজ খুব ভোরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুনছিলুম,ঘাটে মেয়ের উলু দিচ্ছে । শুনে মনটা কেমন ঈষৎ বিকল হয়ে গেল, অথচ তার কারণ ভেবে পাওয়া শক্ত। বোধ হয় এইরকমের একটা আনন্দধ্বনিতে হঠাৎ অনুভব করা যায়, পৃথিবীতে একটা বৃহৎ কর্মপ্রবাহ চলছে যার অধিকাংশের সঙ্গেই আমার যোগ নেই, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ আমার কেউ নয়, অথচ তাদের কত কাজকর্ম সুখদুঃখ উৎসব-আনন্দ চলছে। কী বৃহৎ পৃথিবী ! কী বিপুল মানবসংসার । কত সুদূর থেকে জীবনের ধ্বনি প্রবাহিত হয়ে আসে-সম্পূর্ণ অপরিচিত ঘরের একটুখানি বার্তা পাওয়া যায়। মানুষ যখন বুঝতে পারে ‘আমার কাছে আমি যত বড়োই হই আমাকে দিয়ে সমস্ত বিশ্ব পরিপূর্ণকরতে পারি নে, অধিকাংশ জগৎই আমার অজ্ঞাত, অজ্ঞেয়, অনাত্মীয়, অামাহীন’— তখন এই প্রকাও ঢিলে জগতের মধ্যে আপনাকে অত্যন্ত খাটো এবং একরকম পরিত্যক্ত এবং প্রাস্তবতী ব’লে মনে হয়; তখনই মনের মধ্যে এইরকমের একটা ব্যাপ্ত বিষাদের উদয় হয়। তা ছাড়া এই উলুধ্বনিতে নিজের অতীত ভবিষ্যৎ সমস্ত জীবনটা একটি অতি সুদীর্ঘ পথের মতো চোখের সমুখে উদয় হল এবং তারই এক-একটি সুদূর ছায়াময় প্রান্ত থেকে এই উলুধ্বনি কানে এসে পৌছতে লাগল। এইরকম ভাবে তো আজ দিনটা আরম্ভ করেছি। এখনই সদর নায়েব, আমলাবর্গ এবং প্রজার উপস্থিত হলে এই উলুধ্বনির প্রতিধ্বনিটুকু পাড়া ছেড়ে পালাবে; অতি ক্ষীণ ভূতভবিষ্যৎকে দুই কনুই দিয়ে ঠেলে ফেলে জোয়ান বর্তমান নিজ মূর্তি ধরে সেলাম ঠুকে এসে দাড়াবে। ծ ՀԵ