ՆշԳ শিলাইদহ ৯ ডিসেম্বর ১৮৯২ এখন একলাটি আমার সেই বোটের জানলার কাছে অধিষ্ঠিত হয়ে বহু দিন পরে একটু মনের শান্তি পেয়েছি। স্রোতের অনুকূলে বোট চলছে, তার উপর পাল পেয়েছে ; দুপুরবেলাকার রোদছরে শীতের দিনটা ঈষৎ তেতে উঠেছে; পদ্মায় নৌকো নেই ; শূন্ত বালির চর হলদে রঙ, এক দিকে নদীর নীল আর-এক দিকে আকাশের নীলের মাঝে একটি রেখার মতে আঁকা রয়েছে— জল কেবল উত্তরে বাতাসে খুব অল্প অল্প চিকচিক্ করে র্কাপছে, ঢেউ নেই। আমি এই খোলা জানলার ধারে হেলান দিয়ে বসে অাছি ; আমার মাথায় অল্প অল্প বাতাস লাগছে, বেশ আরাম করছে। অনেক দিন তীব্র রোগভোগের পর শরীরটা শিথিল দুর্বল অবস্থায় আছে, এইরকম সময় প্রকৃতির এই ধীর স্নিগ্ধ শুশ্ৰষা ভারি মধুর লাগছে। এই শীতশীর্ণ নদীর মতো আমার সমস্ত অস্তিত্ব যেন মৃত্যু রৌদ্রে প’ড়ে অলসভাবে ঝিক্ঝিক করছে, এবং যেন অর্ধেক আনমনে চিঠি লিখে যাচ্ছি। প্রতিবার এই পদ্মার উপর আসবার আগে ভয় হয়, অামার পদ্মা বোধ হয় পুরোনো হয়ে গেছে। কিন্তু, যখনই বোট ভাসিয়ে দিই, চারি দিকে জল কুলকুল করে ওঠে— চারিদিকে একটা স্পন্দন কম্পন আলোক আকাশ মৃদু কলধ্বনি, একটা সুকোমল নীল বিস্তার, একটি স্থনবীন শু্যামল রেখা, বর্ণ এবং নৃত্য এবং সংগীত এবং সৌন্দর্যের একটি নিত্য-উৎসব উদঘাটিত হয়ে যায়, তখন আবার নতুন করে আমার হৃদয় যেন অভিভূত হয়ে যায়। এই পৃথিবীটি আমার অনেক দিনকার এবং অনেক জন্মকার ভালোবাসার লোকের মতো অামার কাছে চিরকাল নতুন ; আমাদের দুজনকার মধ্যে একটা খুব গভীর Y 88
পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৪৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
