পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮২ শিলাইদহ ১১ মে ১৮৯৩ কাল বিকেলের দিকে খুব ঘনঘটা ক’রে মেঘ ক’রে খানিকটা বৃষ্টি হয়ে আবার পরিষ্কার হয়ে গেছে। আজ খানকতক দলভ্ৰষ্ট বিচ্ছিন্ন মেঘ সূর্যালোকে শুভ্র হয়ে খুব নিরীহ নিরপরাধ ভাবে আকাশের ধারে ধারে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখে তো মনে হয় এদের বর্ষণের অভিপ্রায় কিছুমাত্র নেই। কিন্তু চাণক্য র্তার সুবিখ্যাত শ্লোকে যাদের যাদের বিশ্বাস করতে নিষেধ করেছেন তার মধ্যে দেবতাকেও ধরা উচিত ছিল। আজ সকাল বেলাটি বড়ো সুন্দর হয়ে উঠেছে— আকাশ পরিষ্কার নীল, নদীর জলে রেখামাত্র নেই এবং ডাঙার কাছে গড়ানে জায়গায় যে ঘাসগুলি হয়েছে তাতে পূর্বদিনকার বৃষ্টির কণাগুলি লেগে সেগুলি ঝকঝক করছে। এই-সমস্ত মিলে সূর্যালোকে আজকের প্রকৃতিকে ভারী একটি শুভ্ৰবসনা মহিমময়ী মহেশ্বরীর মতো দেখাচ্ছে। সকালবেলাটি এমনি নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে। কেন জানি নে নদীতে একটি নৌকো নেই, বোটের নিকটবর্তী ঘাটে কেউ জল নিতে — কেউ স্নান করতে আসে নি, নায়েব সকাল-সকাল কাজ সেরে চলে গেছে। খানিকটা চুপ করে কান পেতে থাকলে কী একটা ঝাবী শব্দ শোনা যায় এবং এই রৌদ্রালোক আর আকাশ আস্তে আস্তে প্রবেশ করে মাথার ভিতরটি একেবারে ভরে ওঠে এবং সেখানকার সমুদয় ভাব ও চিন্তাগুলিকে একটি নীল সোনালি রঙে রঙিয়ে দেয়। বোটের এক পাশে একটা বাকী কোঁচ আনিয়ে রেখেছি, এইরকম সকালবেলায় তার মধ্যে শরীরটা ছড়িয়ে দিয়ে সমস্ত কাজ ফেলে চুপচাপ করে পড়ে থাকতে ইচ্ছে করে, মনে হয়— ჯWNo