পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बिजोहेलठ् ২ জুলাই ১৮৯৩ কোনো জিনিস যথার্থ উপভোগ করতে গেলে তার চতুর্দিকে অবসরের বেড়া দিয়ে ঘিরে নিতে হয়— তাকে বেশ অনেকখানি মেলিয়ে দিয়ে, ছড়িয়ে দিয়ে, চতুর্দিকে বিছিয়ে দিয়ে, তবে তাকে ষোলো-আন আয়ত্ত করা যায়। মফস্বলে একলা থাকবার সময়-যে বন্ধুবান্ধবদের চিঠিপত্র এত ভালো লাগে তার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে— প্রত্যেক অক্ষরটি পর্যন্ত একটি একটি ফোটার মতো করে নিঃশেষপূর্বক গ্রহণ করবার অবসর পাওয়া যায় ; মনের কল্পনা ওর প্রত্যেক কথায় লতিয়ে-লতিয়ে জড়িয়ে-জড়িয়ে ওঠে— বেশ অনেক ক্ষণ ধরে একটা গতি অনুভব করা যায়। অতি লোভে তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে সেই সুখ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সুখের ইচ্ছেটা এমনি তাড়াতাড়ি এগিয়ে এগিয়ে চলে যে, অনেক সময়ে সুখটাকেই ডিঙিয়ে চলে যায়, এবং চক্ষের পলকে সমস্ত ফুরিয়ে ফেলে। এইরকম জমিজমা আমলামামলার মধ্যে কোনো চিঠিকেই যথেষ্ট মনে হয় না— মনে হয়, যেন ক্ষুধার যোগ্য অন্ন পাওয়া গেল না। কিন্তু যত বয়স হচ্ছে তত এইটে দেখছি, পাওয়াটা নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। অন্তে কতটা দিতে পারে তা নিয়ে নালিশ-ফরিয়াদি করা ভুল, আমি কতটা নিতে পারি এইটেই হচ্ছে আসল কথা। যা হাতের কাছে আসে তাকেই পুরোপুরি হস্তগত করে নেওয়া অনেক শিক্ষা সাধন এবং সংযমের দ্বারা হয়। সে শিক্ষা লাভ করতে জীবনের প্রায় বারো-আনা কাল চলে যায়, তার পরে সে শিক্ষার ফল ভোগ করবার আর বড়ো সময় পাওয়া যায় না । ইতি মুখতত্ত্বশাস্ত্রের প্রথম অধ্যায়। ➢ ግ8